আলোচিত ৭ খুনের ১০ বছর: বিচার পায়নি নিহতের স্বজনরা

দীর্ঘ ১০ বছরেও নারায়ণগঞ্জের বহুল আলোচিত সাত খুন মামলার রায় কার্যকর হয়নি।২০১৪ সালের এই দিনে (২৭ এপ্রিল) সাত জনকে অপহরণ করে খুন করা হয়। পরে একে এক তাদের লাশ শীতলক্ষ্যা নদীতে ভেসে উঠে। এই ঘটনায় নিম্ন আদালতে ২৬ জনকে মৃত্যুদণ্ড সহ ৯ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়। এবং পরে উচ্চ আদালতে ১৫ আসামির মৃত্যুদণ্ডের আদেশ বহাল রেখে অন্যান্য আসামির বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়। তবে দীর্ঘ প্রায় সাড়ে পাঁচ বছর ধরে সুপ্রীমকোর্টের আপিল বিভাগে মামলাটি শুনানির অপেক্ষায় আটকে আছে। এতে বেশ ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নিহতের স্বজনরা।

জানা যায়, সাত খুনের মামলায় ২০১৭ সালের ১৬ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ৪নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর নূর হোসেন, র‌্যাব-১১’র চাকরিচ্যুত সাবেক অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, মেজর আরিফ হোসেন ও লেফটেন্যান্ট কমান্ডার এম মাসুদ রানাসহ ২৬ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ৯ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা প্রদানের আদেশ দেন।

পরে উচ্চ আদালতে আপিল করা হয়। ২০১৮ সালে ২২ আগস্ট ১৫ আসামির মৃত্যুদণ্ডের আদেশ বহাল রেখে অন্যান্য আসামির বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেন উচ্চ আদালত। বর্তমানে মামলাটি সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগে সাড়ে পাঁচ বছর ধরে শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।

নিন্ম আদালত থেকে হাইকোর্টের দেওয়া রায় সন্তোষজনক হয়েছে বলে জানিয়েছেন নিহতের পরিবারের সদস্যরা। তবে আপীল বিভাগেও এ রায় বহাল থাকবে বলে প্রত্যাশা করছেন নিহতের স্বজনরা। সেই সাথে সাজার রায় দ্রুত কার্যকর করার দাবী জানান তারা।

বিচার দাবি করে নিহত কাউন্সিলর নজরুল ইসলামের স্ত্রী ও মামলার বাদী সেলিনা ইসলাম বিউটি বলেন, ‘দশ বছর ধরে বিচারের অপক্ষোয় আছি। আসামি পক্ষের লোকজন এখনো প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে আসছে। উপার্জনক্ষম সাতজন মানুষকে হারিয়ে পরিবারগুরো নি:শ্ব হয়ে গেছে। এখন সরকারের কাছে শুধু বিচার দাবি করছি।

শঙ্কা প্রকাশ করে নিহত তাজুলের বাবা আবুল খায়ের বলেন, বিচার পাবো কিনা তা আদৌ জানিনা। তবে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী তিন বছর দ্রুত গতিতে মামলার বিচার কাজ এগিয়ে গেছে। কিন্তু আপিল বিভাগে দীর্ঘদিন ধরে কেন মামলাটি ঝুলে আছে, তা বুঝতে পারছিনা।

নিহত জাহাঙ্গীরের স্ত্রী নুপুর বেগম বলেন, দশ বছর ধরে বিচারের আশায় বুক বেধেঁ আছি। কিন্তু বিচারের তো পাচ্ছিনা। বিচার চাইতে চাইকে ক্লান্ত হয়ে পড়ছি।

বাদী পক্ষের আইনজীবী সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগে দীর্ঘদিন ধরে মামলাটি ঝুলে আছে। অথচ নিম্ন আদালত খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে রায় দিয়েছে।

তিনি আরও বলেন, এই খুনের সাথে বিপদগামী র‌্যাব কর্মকর্তা, সদস্য সহ প্রভাশালী কাউন্সিলর জড়িত। এই হত্যাকান্ডের বিচারে যাতে না হয় ওই গোষ্ঠিটি র্দীঘদিন ধরে সেই চেষ্টা তদবির চালিয়ে আসছে। আমরা চাই মামলার রায় বহাল রেখে মামলাটি দ্রুত নিস্পত্তি করা হোক। এবং এই মামলার রায় কার্যকর করা হোক।

নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পিপি মনিরুজ্জামান বুলবুল বলেন, সাত খুন মামলা সারা দেশে বেশ আলোচিত মামলা। তবে মামলাটি সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাবে মামলাটি চলমান রয়েছে। প্রত্যাশা করছি, দ্রুত সময়ের মধ্যে রায় ঘোষণা করা হবে।

উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ আদালতে মামলায় হাজিরা দিয়ে ফেরার পথে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের ফতুল্লার লামাপাড়া এলাকা থেকে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র-২ নজরুল ইসলাম, তার সহযোগী মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম, বন্ধু সিরাজুল ইসলাম লিটন, মনিরুজ্জামান স্বপনের গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলম, আইনজীবী চন্দন কুমার সরকার এবং তার ব্যক্তিগত গাড়িচালক ইব্রাহিমসহ সাতজন অপহৃত হন।

অপহরণের তিনদিন পর ৩০ এপ্রিল নজরুল ইসলামসহ ৬ জন ও ১ মে সিরাজুল ইসলাম লিটনের লাশ শীতলক্ষ্যা নদীর বন্দরের শান্তিরচর থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। এই ঘটনায় নিহত নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি ও নিহত আইনজীবী চন্দন সরকারের জামাতা বিজয় কুমার পাল বাদী হয়ে ফতুল্লা থানায় আলাদা দুটি মামলা করেন।