এমপি বাবু ‘হুইপ’ হিসেবে যেসব সুযোগ-সুবিধা পাবেন

নারায়ণগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবু সহ পাঁচজন সংসদ সদস্যকে জাতীয় সংসদের হুইপ হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার (২৩ জানুয়ারি) জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। ফলে নিয়ম অনুযায়ী, হুইপ হিসেবে এমপি বাবু সহ ৫ জন সংসদ সদস্য প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদাসহ সমপরিমাণ সুযোগ সুবিধা পাবেন।

আইনে বলা হয়েছে, চিফ হুইপ পূর্ণমন্ত্রীর পদমর্যাদাসহ সব ধরনের সুযোগ সুবিধা প্রাপ্য হন। আর হুইপরা প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদাসহ সমপরিমাণ সুযোগ সুবিধা প্রাপ্য হন। চিফ হুইপ মন্ত্রীদের সমপরিমাণ বেতন, ভাতা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার অধিকারী হন। তিনি নিজের পছন্দ মতো একজন অফিস সহকারী পান। হুইপরা পান প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা ও তাদের সমপরিমাণ বেতন, ভাতা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা।

একজন মন্ত্রীর মাসিক বেতন ১ লাখ ৫ হাজার টাকা। প্রতিমন্ত্রীর বেতন ৯২ হাজার এবং উপমন্ত্রীর ৮৬ হাজার ৫০০ টাকা। দায়িত্ব পাওয়ার পর একজন মন্ত্রী সরকারি ব্যয়ে একটি সুসজ্জিত বাসভবন পান বিনা ভাড়ায়। প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীও একই সুবিধা পেয়ে থাকেন। মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা গণপূর্ত থেকে আবাসন সুবিধা পেলেও চিফ হুইপ ও হুইপরা পান সংসদ সচিবালয় থেকে।

মন্ত্রী যদি সরকারি বাড়িতে না থেকে নিজ বাড়ি বা ভাড়া বাড়িতে থাকেন, তাহলে সরকার থেকে তিনি মাসিক ৮০ হাজার টাকা করে ভাড়া পাবেন। প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী পাবেন ৭০ হাজার টাকা করে। এছাড়া নিজ বাড়ি বা ভাড়া বাড়িতে বসবাস করলে সেটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বছরে তিন মাসের বাড়ি ভাড়ার সমপরিমাণ টাকা পাবেন তারা। চিফ হুইপ ও অন্য হুইপরাও এ সুবিধা নিতে পারেন।

নিজ এলাকার মসজিদ, মন্দির উন্নয়নসহ এলাকার মানুষের দাতব্য কাজে একজন মন্ত্রীকে বছরে ১০ লাখ টাকা দেওয়া হয়। এ খাতে প্রতিমন্ত্রী পাবেন সাড়ে ৭ লাখ ও উপমন্ত্রী পাবেন ৫ লাখ টাকা করে। এ টাকার মধ্যে মন্ত্রী চাইলে একজন ব্যক্তিকে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা দিতে পারেন। প্রতিমন্ত্রী দিতে পারেন ৩৫ হাজার, আর উপমন্ত্রী ২৫ হাজার টাকা। এলাকার উন্নয়নে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীদের এই টাকার কোনও নিরীক্ষা হয় না। ফলে এ টাকা খরচে অনেকটা উদার থাকেন তারা।

মন্ত্রী হওয়ার পর তার দফতরে দেশি-বিদেশি অনেকে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে আসেন। নির্বাচনি এলাকার মানুষও দেখা করতে আসেন। তাদের আপ্যায়নের জন্য একজন মন্ত্রী মাসে ১০ হাজার টাকা করে পান। এ খাতে প্রতিমন্ত্রী সাড়ে ৭ হাজার টাকা আর উপমন্ত্রী ৫ হাজার টাকা পেয়ে থাকেন। বিমান ভ্রমণের ক্ষেত্রে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী বছরে বিমা সুবিধা পাবেন ১০ লাখ টাকা।

মন্ত্রিসভার সদস্যরা অসুস্থ হলে তার পুরো চিকিৎসার খরচ সরকার বহন করে। এ ক্ষেত্রে বলা আছে, চিকিৎসা খরচ সীমাহীন। সরকার তার পুরো চিকিৎসার খরচ দেবে। তবে খরচের ভাউচার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে জমা দিতে হবে।

দায়িত্ব পাওয়ার পর মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী সরকারি খরচে একটি করে গাড়ি সুবিধা পাবেন। এই গাড়ি পরিবহন পুল সরবরাহ করে। তবে চিফ হুইপ ও হুইপদের গাড়ি সরবরাহ করে সংসদ সচিবালয়। এছাড়া সরকারি প্রয়োজনে ভ্রমণের সময় তারা মন্ত্রণালয়ের অধীনে যেকোনও সংস্থা বা দফতর থেকে একটি জিপ গাড়ি পাবেন। জ্বালানি বাবদ মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী দৈনিক ১৮ লিটার জ্বালানি তেলের সমপরিমাণ অর্থ পাবেন।

একজন মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী দেশের ভেতরে কোথাও ভ্রমণে গেলে দৈনিক ভাতা পাবেন দুই হাজার টাকা করে। ফলে চিফ হুইপও এই সুবিধা পাবেন।

সরকারি বাড়ি সাজসজ্জা করতে একজন মন্ত্রী প্রতিবছর পাবেন পাঁচ লাখ টাকা। প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীরা পাবেন চার লাখ টাকা করে। এছাড়া মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীদের বাসভবনে বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি ও টেলিফোন ব্যয় যা আসবে, সরকার পুরোটাই বহন করবে।

মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী উপসচিব পদমর্যাদার একজন একান্ত সচিব (পিএস) পাবেন। এর বাইরে একজন সহকারী একান্ত সচিব এবং সরকারি কর্মকর্তার বাইরে নিজের পছন্দের একজন সহকারী, একান্ত সচিব পেয়ে থাকেন। এছাড়া দুই জন ব্যক্তিগত কর্মকর্তা, একজন জমাদার, একজন আরদালি, দুই জন অফিস সহায়ক ও একজন পাচক পেয়ে থাকেন। প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী একজন একান্ত সচিব, একজন ব্যক্তিগত সহকারী, একজন জমাদার, একজন আরদালি ও একজন অফিস সহায়ক পেয়ে থাকেন। এছাড়া মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীরা একটি করে মুঠোফোন পাবেন।    

তবে সরকারি এসব সুবিধা পেতে বেশ কিছু কাজ করতে হয় চিফ হুইপ ও হুইপদের। আইনে চিফ হুইপের সুনির্দিষ্ট চারটি কাজের কথা উল্লেখ রয়েছে। এগুলো হচ্ছে– সংসদ সদস্যদের কার্যক্রম সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করা; অধিবেশনে এমপিদের উপস্থিতি নিশ্চিত করা; প্রতিটি বৈঠকের কার্যক্রম ঠিক করা এবং সরকার কর্তৃক অর্পিত বা নির্ধারিত অন্যান্য কাজ সম্পাদন করা।

অপরদিকে আইন অনুযায়ী হুইপদের দায়িত্ব হচ্ছে চিফ হুইপ বা সরকার কর্তৃক অর্পিত বা নির্ধারিত কাজগুলো সম্পাদন করা।

আইন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, চিফ হুইপ ও অন্য হুইপরা যে দায়িত্ব পালন করেন তার অন্যতম হলো– সংসদ সদস্যদের সংসদের বৈঠকে উপস্থিতি নিশ্চিত করা। সংসদে কোরাম সংকটের আশঙ্কা হলে আশপাশে (লবি) অবস্থানরত এমপিদের সংসদে ডেকে আনা। কোনও প্রশ্নে ভোট হলে সরকার ও বিরোধী দল উভয়পক্ষের প্রয়োজন পড়ে স্ব-স্ব পক্ষের যথাসম্ভব অধিক সংখ্যক সদস্যকে পার্লামেন্টে হাজির রাখা। হুইপরা সেই কাজটি করেন।