কাঞ্চন পৌরসভায় উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় চলছে নির্বাচনী প্রচারণা, শঙ্কিত ভোটারা

আর মাত্র দুই দিন পর (২৬ জুন) নারায়ণগঞ্জের কাঞ্চন পৌরসভা নির্বাচনের ভোট অনুষ্ঠিত হবে। শেষ সময়ে চলছে পুরোদমে প্রচার প্রচারণার কাজ। মেয়র পদে দুই জন প্রার্থী সহ ৩৩ জন কাউন্সিলর ও ৪ জন মহিলা কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন। তবে মেয়র পদে জগ প্রতীকের রফিকুল ইসলাম রফিকের সঙ্গে মোবাইল ফোন প্রতীকের প্রার্থী দেওয়ান আবুল বাশার বাদশার হাড্ডাহাড্ডি লড়াই শুরু হয়েছে। ভোটের আগেই প্রচারণার মাঠে উত্তেজনা শুরু হয়েছে। মেয়র প্রার্থীর ওপরে হামলা, পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা, হুমকি-ধামকি সহ বিভিন্ন বিশৃঙ্খলার ঘটনা ঘটেছে। এর ফলে মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি বাকযুদ্ধ শুরু হয়েছে। এতে ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

জানা গেছে, কাঞ্চন পৌরসভা নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ৪০ হাজার ৭৯৮ জন। তবে নির্বাচনে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দুই মেয়র প্রার্থীসহ ৩৭ জন কাউন্সিলর প্রার্থী নিজেদের মতো করে গণসংযোগ, উঠান বৈঠক ও প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে আসছেন। তবে গণসংযোগ ও প্রচারণার পাশাপাশি ঘটছে হামলা ও সহিংসতার ঘটনাও। সর্বশেষ ১৯ জুন বিকেলে কাঞ্চনের কলাতলী এলাকায় গণসংযোগ ও প্রচারণা শেষে ফেরার পথে মেয়র প্রার্থী রফিক ও তার সমর্থকদের ওপর বাদশার সমর্থক কাউন্সিলর আইয়ুব খানের নেতৃত্বে হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় মেয়র প্রার্থী রফিকসহ অন্তত ২০ জন আহত হন। যদিও দেওয়ান আবুল বাশার বাদশা তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী রফিকের বিরুদ্ধে হামলা চালানোর পাল্টা অভিযোগ করেন। ২০ জুন নির্বাচনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির কারণে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কারণ দর্শানোর জন্য কাউন্সিলর আইয়ুব খানকে শোকজ করে নির্বাচন কমিশন। এ ছাড়া ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি-ধমকি দেওয়ার নানা অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। 

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, কাঞ্চন পৌরসভার পাড়া-মহল্লা সহ পুরো সড়ক পোস্টারে পোস্টারে ছেয়ে গেছে। সড়কগুলোতে অটোরিকশা সহ বিভিন্ন যানবাহনে করে প্রার্থীদের পক্ষে মাইকিং চলছে। পুরো পৌরসভার এলাকা জুড়ে চলছে উৎসবের আমেজ। পাড়া-মহল্লার চায়ের দোকানগুলোতে বিভিন্ন প্রার্থীর সমর্থকদের আড্ডা বেশ জমে উঠেছে। এছাড়া কিছুক্ষণ পর পর বিভিন্ন প্রার্থীদের প্রচারণা চালতে দেখা যায়।

এ সময় রূপগঞ্জের কাঞ্চন মধ্য বাজার এলাকায় গণসংযোগ করতে দেখা যায় জগ প্রতীকের মেয়র প্রার্থী রফিকুল ইসলাম রফিককে। গণসংযোগের সময়ে তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘হত্যা মামলার ফেরারি আসামিকে নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী (দেওয়ান আবুল বাশার বাদশা)  প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। তারাই আমাকে হুমকি দিচ্ছে, আমাকে গুম করে ফেলার হুমকি দিচ্ছে। সবশেষ কলাতলি এলাকায় আমাদের ওপরে দেশিয় অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে তারা আমাদের ওপরে হামলা করেছিল। বহিরাগত ও সন্ত্রাসীরা যদি নির্বাচনের দিনে থাকে, তাহলে আজকে এই সুষ্ঠু পরিবেশ বর্জায় থাকবে না। 

ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র দখল করে তারা ভোট মারবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, নির্বাচনের দিনে তারা বেঁছে বেঁছে কিছু কেন্দ্র দখল করে আমাদের এজেন্ট দিতে দেবে না। বরং তাদের ইচ্ছেমত ভোট সংগ্রহ করবে। ৯ নং ওয়ার্ড হাটাবো টেকপাড়া, কাঞ্চন ভারচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়, লাল মাহমুদ হাফিজিয়া মাদ্রাসা, তারাইন মহরালী শাহীনুরবানু উচ্চ বিদ্যালয়। এই কেন্দ্রগুলো খুব ঝুঁকিপূর্ণ। কেন্দ্রগুলোতে তার কর্মীরা সন্ত্রাসী কায়দায় এসব কর্মকাণ্ড চালাবে। 

এদিকে গত গত রবিবার (১৬ জুন) কাঞ্চন পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী দেওয়ান আবুল বাশার বাদশার লিফলেট ও ভোটার স্লিপ দিয়ে জনপ্রতি ৫’শ টাকা বিতরণ করার বেশ কয়েকটি স্থির চিত্র (ছবি) ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে পরবর্তীতে কালো টাকা ছড়িয়ে ভোট কেনার অভিযোগ করেন প্রতিদ্বন্দ্বী মেয়র প্রার্থী রফিকুল ইসলাম রফিক।

একইভাবে পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় জোরে সোরে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন মোবাইল ফোন প্রতীকের প্রার্থী দেওয়ান আবুল বাশার বাদশা। তিনি এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমার জনপ্রিয়তা দেখে তারা মিথ্যা প্রপাগণ্ডা চালাচ্ছে। উল্টো তাদের লোকজন দলবদ্ধ হয়ে ভোটারদের হুমকি দিচ্ছে, যাতে করে আমার মোবাইল ফোন প্রতীকে কেউ ভোট না দেয়।

তবে দফায় দফায় হামলা ও পাল্টাপাল্টি বাকযুদ্ধের ফলে ভোটারদের মধ্যে বিরুপ প্রভাব পড়েছে। কাঞ্চন মধ্য বাজার এলাকার দোকানি আলী হোসেন বলেন, আমরা কোন ঝগড়া-বিবাদ চাই না। ভোট দেওয়া নিয়ে কোন সংঘর্ষ চাই না। ভোটের দিন পরিস্থিতি দেখে কেন্দ্রে যাবো। 

এদিকে নির্বাচনের দিন কাঞ্চন পৌরসভা এলাকায় বহিরাগতদের অবস্থান নিষেধ করেছে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা কর্মকর্তা ও রিটার্নিং অফিসার। ২৩ জুন বিকেলে এক বিজ্ঞপ্তিতে জেলা নির্বাচন অফিস এ তথ্য জানায়।

রিটার্নিং অফিসার ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. ইস্তাফিজুল হক আকন্দ বলেন, কাঞ্চন পৌরসভায় একটু ব্যতিক্রম চিত্র দেখা যাচ্ছে। এখানে প্রতিদিন উত্তেজনা বিরাজ করছে। প্রতীক বরাদ্দের দিন থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত যতগুলো হামলার ঘটনা ঘটেছে সবগুলোতে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সর্বশেষ কলাতলীতে হামলার ঘটনায় ৬জনকে গ্রেফতার করা হয়। পরে একজন মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পেয়েছে। বাকিরা সবাই জেলে আছেন।

ভোটাররা আতঙ্কিত উল্লেখ করে তিনি বলেন, সাধারণ ভোটাররা আসলেই আতঙ্কিত হয়েছে। তবে তাদেরকে আমরা আশ্বস্ত করতে চাই, এখন একটা কাক-পক্ষিও উড়তে পারবে না। নির্বাচনে ১৯ টা কেন্দ্র ভেনু মাত্র ১৩টা। এখানে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবে র‌্যাব, বিজিবি, নিয়মিত পুলিশ বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থা সহ আনসার বাহিনী।