নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার ময়লা-আবর্জনা অপসারণ করতে সড়কে নামলেন সেই আলোচিত সেলিম প্রধান। রবিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে ভুলতা ফ্লাইওয়ারের নিচে সড়ক ও ফুটপাতের ময়লা তার উদ্যেগে অপসারণ করা হয়। এ সময় রূপগঞ্জের ময়লা পরিষ্কার করার পরিকল্পনার কথা জানান তিনি।
জানা গেছে, সেলিম প্রধান নিজ উদ্যোগে কয়েকজন পরিচ্ছন্ন কর্মী দিয়ে সড়ক ও ফুটপাতের আশেপাশের ময়লা অপসারণ করান। ভুলতা পুলিশ ফাঁড়ির সামনের সড়ক থেকে শুরু করে ফ্লাইওভারের পুরো সড়ক ও ফুটপাতের ময়লা অপসারণ করা হয়।
এ বিষয়ে সেলিম প্রধান বলেন, ফ্লাইওভারের নিচে ময়লা-আবর্জনা ছিল। আজকে পুরো সড়ক পরিষ্কার হয়েছে। আরও যেটুকু নোংরা আছে, তা ঠিক হয়ে যাবে। রূপগঞ্জ ওয়ান ফ্যামিলি- আমরা সবাই একটা পরিবার। সবাই মিলে ভালো কাজ করতে হবে। এর অংশ হিসেবে আমাদের সমাজের ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার দিয়ে শুরু করেছি। আমাকে দেখে যাতে সবাই এসব কাজে অনুপ্রাণিত হয়ে এগিয়ে আসে এবং সমাজের জন্য এলাকার মানুষের জন্য কাজ করে সেটাই আমার একমাত্র চাওয়া।
তিনি আরও বলেন, রূপগঞ্জ জাপানের মত পরিষ্কার করবো। আমি একজন ব্যবসায়ী । তাই প্রতিটা ব্যবসায়ীকে অনুরোধ করবো আপনারা ভালো কাজ করবেন। সন্ত্রাসীদের ভয় করে চাঁদা দেবেন না। এলাকার ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করে দেন। এলাকার ভালো কাজে অংশগ্রহণ করেন, সহযোগিতা করেন।
হঠাৎ করে এমন উদ্যোগ কেন গ্রহণ করলেন, এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি চার বছর জেল খেটে এসেছি। আমাকে ষড়যন্ত্র করে জেলে পাঠানো হয়েছে। সে বিষয়ে সব তথ্য প্রমাণ আমার কাছে আছে। সেগুলো সময় হলে সবার সামনে প্রকাশ করবো ওদের মুখোশ উন্মোচন করে দিবো। তবে জেলের ওই চার বছরে আমি জেলে বসেই পরিকল্পনা করেছি, বাকি জীবনটা আমি রূপগঞ্জে কাটাবো, রূপগঞ্জ পরিষ্কার করবো। সমাজ থেকে মাদক, সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজি দূর করবো। ক্লিন রূপগঞ্জ গড়ে তুলবো।
ময়লা অপসারনের এই দৃশ্য দেখে স্থানীয় বাসিন্দা ও বৃদ্ধ নওয়াব আলী ছুটে এসে গণমাধ্যমকে বলেন, সেলিম প্রধান আমাদের এলাকার জন্য অনেক কাজ করছে। তার মত লোকজন থাকলে এই এলাকা আরও আগে উন্নত হতো। নানা ধরনের সমস্যা অচিরেই সমাধান হতো। আজকে তার জন্য চাঁদাবাজরা চাঁদা নিতে পারেনা। অবৈধ দোকান-পাট অপসারণ হয়েছে। এগুলো সব তার প্রচেষ্টার ফসল।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় ভুলতা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, ফুটপাত ও যানজট সমস্যা নিরসনে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। ইতোমধ্যে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে সড়ক ও ফুটপাত থেকে অবৈধ দোকান অপসারণ করেছি। অবৈধ দোকান বসিয়ে কাউকে চাঁদাবাজি করতে দেওয়া হবেনা। আর সড়কে যানজট সৃষ্টি করে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করতে দেওয়া হবেনা। আর ময়লা পরিষ্কারে আমাদের কোন ফান্ড নেই। তাই স্থানীয় গণামান্য ব্যক্তিদের সহায়তায় ময়লা অপসারণ কাজ করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান চলাকালে ২০১৯ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর রাতে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সেলিম প্রধানকে আটক করা হয়। পরে তার রাজধানীর গুলশানের বাসা, বনানীর বাসা ও অফিসে অভিযান চালায় র্যাব। অভিযানে ২৯ লাখ টাকা, বিপুল পরিমাণ বিদেশি মদ ও বিভিন্ন দেশের মুদ্রা জব্দ করা হয়। পরে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও অর্থপাচারের অভিযোগে সেলিমের বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের ২৭ অক্টোবর মামলা করে দুদক। তদন্ত শেষে ২০২১ সালের ১৭ জানুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় সংস্থাটি। ২০২৩ সালের ৩০ এপ্রিল জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও অর্থপাচারের মামলায় সেলিম প্রধানকে আট বছর কারাদণ্ড ও ১১ লাখ টাকা জরিমানা করেন ঢাকার বিশেষ আদালত। প্রায় চার বছর জেল খেটে সম্প্রতি জামিন নিয়ে কারাগার থেকে বের হন তিনি। জামিনে বের হয়ে তিনি নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করেন। এবং তাকে ষড়যন্ত্র করে ফাঁসানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন। এ বিষয়ে তিনি খুব শিঘ্রই প্রমাণ সহ মুখ খুলবেন বলে জানিয়েছেন।
জানা গেছে, সেলিম প্রধান ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ‘প্রধান গ্রুপ’-এর কর্ণধার। তার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে জাপান-বাংলাদেশ সিকিউরিটি প্রিন্টিং অ্যান্ড পেপারস লিমিটেড, পি২৪ ল’ ফার্ম, এইউ এন্টারটেইনমেন্ট, পি২৪ গেমিং, প্রধান হাউজ ও প্রধান ম্যাগাজিন।