গণপিটুনিতে নিহত ৪ জন ডাকাতির উদ্দেশ্যে জড় হয়েছিল, রয়েছে একাধিক মামলা

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে ডাকাত ঘোষণা দিয়ে গণপিটুনিতে চার জন নিহত হওয়ার ঘটনায় বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। এই ঘটনায় নিহত ও আহতরা সবাই ডাকাতির উদ্দেশ্যে সেদিন জড় হয়েছিলেন বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে। এছাড়াও নিহতদের বিরুদ্ধে ডাকাতির একাধিক মামলা রয়েছে।

নিহতরা হলেন- সোনারগাঁয়ের রাজাপুর শেখেরহাট গ্রামের জাকির হোসেন (৩৬), আড়াইহাজারের কালাপাহাড়িয়া ইউনিয়নের শামসুল হকের ছেলে আব্দুর রহিম (৪৮), একই উপজেলার জালাকান্দী গ্রামের মজিদ হোসেনের ছেলে নবী হোসেন(৩৫)। আব্দুর রহিম গত বছরের মার্চে ডাকাতির মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। নবী হোসেনের বিরুদ্ধেও ডাকাতির মামলা রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। নিহত আরেক জনের পরিচয় এখনো পাওয়া যায়নি। নিহতদের মধ্যে জাকিরের মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে আছে। আহত মোহাম্মদ আলীকে ঢাকার জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (নিটোর) ভর্তি করা হয়েছে।

পুলিশ জানায়, রাত সাড়ে ১১টার দিকে ডাকাত সন্দেহে গণপিটুনির খবর আসে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (‘খ’ সার্কেল) বিল্লাল হোসেনের নেতৃত্বে বড়বিলে গিয়ে বাঘরী গ্রাম থেকে একজনকে মৃত এবং দুইজনকে গুরুতর আহত অবস্থায় পাওয়া যায়। আহতদের মধ্যে একজন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান। পরে সকালে বিলের সুখেরটেক গ্রামে আরও দুজনের লাশ পাওয়া যায়।

স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার রাতে কাজরদী গ্রামে এক বাড়িতে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ডাকাতরা এক জনকে কুপিয়ে আহত করে। এই ঘটনার পর থেকে গ্রামবাসী ক্ষুব্ধ ছিল। রোববার রাতে কয়েকজনকে বিলে ঘোরাফেরা করতে দেখে আশেপাশের একাধিক গ্রামের মসজিদের মাইকে ডাকাত পড়ার ঘোষণা দেওয়া হয়। পরে গ্রামবাসী ধারালো অস্ত্র ও লাঠিসোটা নিয়ে ধাওয়া দিয়ে কয়েকজনকে পিটুনি দেয়।

সুরতহাল প্রতিবেদনে হতাহতদের শরীরে শাবল, টেঁটাসহ বিভিন্ন ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। তবে ঘটনাস্থল থেকে কোনো অস্ত্র উদ্ধার হয়নি বলে জানিয়েছে পুলিশ।

নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (খ সার্কেল) শেখ বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘এ ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে একটি মামলা হবে। নিহত ডাকাতদের মধ্যে জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানায় অন্তত ১০টি ও মোহাম্মদ আলীর বিরুদ্ধে ১টি ডাকাতির মামলা আছে। জাকির সোনারগাঁয়ের দুর্ধর্ষ ডাকাত সরদার। তাঁর জন্ম উপজেলার জামপুরে হলেও তিনি বড় হয়েছেন ঘটনাস্থলের পাশের গ্রাম সুখেরটেকে। তাঁর মামা আনোয়ার হোসেনও পুলিশের তালিকাভুক্ত ডাকাত সদস্য। মামার হাত ধরেই জাকিরের ডাকাতি শুরু। চিকিৎসাধীন মোহাম্মদ আলীর জবানবন্দি ও প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, জাকির হোসেনের নেতৃত্বে গতকাল রাতে সাতজন ডাকাতির উদ্দেশ্যে ওই বিলে (বাঘরী বড় বিল) জড়ো হয়েছিল।’

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ২০২২ সালের ৩ মার্চ উপজেলার সাদীপুরের নানাখী গ্রামে ডাকাতি করতে গিয়ে দুই সঙ্গীসহ গণপিটুনির শিকার হন জাকির। গত বছর উপজেলার মহজমপুর গ্রামে এক পুলিশ পরিদর্শকের বাড়িতে ডাকাতি করার পর গ্রেপ্তার হন তিনি। ২০১৬ সালেও ওই বিলে ডাকাত সন্দেহে গ্রামবাসীর গণপিটুনিতে এক ব্যক্তি নিহত হন।