নিজস্ব প্রতিনিধি :
নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার পাগলায় চাঁদের আলো নামে মাদকাসক্তি নিরাময় ও পুনর্বাসক কেন্দ্রে যুবককে মারধরের ভিডিও ভাইরাল হওয়ার ঘটনায় সংবাদ সম্মেলন করেছে ভুক্তিভোগি যুবক সহ প্রতিষ্ঠানের পরিচালক
আক্তারুজ্জামান পাটোয়ারী। তবে ভিডিও তে ভাইরাল হওয়া ভুক্তভোগি যুবক তাসফির আহমেদ নিলয় উল্টো সম্মান ক্ষুন্ন করার অভিযোগ করে বিচার দাবি করেছেন। এমনকি প্রতিষ্ঠানের পরিচালককে মামা হিসেবে সম্মোধন করে উল্টো তারা ঘটনার দিন অপরাধ করেছেন বলে জানিয়েছেন।
বুধবার (৬ সেপ্টেম্বর) বিকেলে পাগলা দক্ষিন নয়ামাটি এলাকায় চাঁদের আলো নামে মাদকাসক্তি নিরাময় ও পুনর্বাসক কেন্দ্রে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান ভুক্তভোগি সহ প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা।
সংবাদ সম্মেলনে চাঁদের আলো মাদকাসক্তি নিরাময় ও পুনর্বাসন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক আক্তারুজ্জামান পাটোয়ারী বলেন, ‘আমরা ২০২১ সালে এই প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স পেয়েছি। এই সময়ে আমরা সুনামের সাথে কার্য সম্পন্ন করে আসছি। আমরা এখানে মানব সেবা করতে বসেছি। তবে আমাকে নিয়ে তিন দিন যাবত বিভিন্ন মিডিয়া ও গণমাধ্যমে লেখালেখি হচ্ছে। নানা ভাবে হয়রানি করছে। এই হয়রানির হাত থেকে বাঁচার জন্য ঘটনার ভিকটিমদের নিয়ে আমি সংবাদ সম্মেলন করতে বাধ্য হলাম। এবং এই হয়রানি ও সম্মান ক্ষুন্ন হওয়ার বিচার দাবি করছি। আমি অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
ভাইরাল ভিডিও প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘যে ভিডিও ভাইরায় হয়েছে সেই ভিডিও তে থাকা ভিকটিম আমার ভাগিনা নিলয় আমার পাশে বসে আছে। ভিডিও টি আজ থেকে প্রায় তিন মাস আগের ধারণ করা। ওই সময় আমার ভাগনে তাসফির আহমেদ নিলয় এখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ছিলেন। সে সময় নিলয় সহ আরও দুইজন সহ তিন জনের একটি গ্রুপিং হয়। তারা আমার এই প্রতিষ্ঠানের স্টোর রুমের দেওয়াল পুতা দিয়ে ভেঙে পালাতে চেয়েছিল। যদি তারা পালিয়ে যেত তাহলে আমি তার অভিভাবকদের কাছে কি জবাব দিতাম। তাছাড়া আমার ভাগনের বাবা-মা দুবাই বসবাস করে আসছে। সে হিসেবে আমি ছাড়া তাকে শাসন করার আর কেউ নেই। সে কারণে ভাগনের অভিভাবক হিসেবে আমি তাকে শাসন করেছি। তার বিচার করেছি। তবে এ নিয়ে যদি আমার ভাগনের কোন অভিযোগ থাকতো তাহলে আপনারা আমাকে শাস্তি দিতে পারতেন। সুতরাং একটা ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে এই ভিডিও ধারণ করে ভাইরাল করা হয়েছে এবং সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।
ষড়যন্ত্রের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিভিন্ন লোক নতুন নতুন প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে। তারা মূলত আমার বিরোধীতা করছে। তাদের মধ্যে অনেকে এক সময় আমার এখান কাজ করেছে, দায়িত্ব পালন করেছে। তারা এক সময় আমার জায়গা দখল করতে চেয়েছে। তার অংশ হিসেবে তারা দুই বছর যাবত ষড়যন্ত্র করছে। আর সেই দিনের ভিডিও পেয়ে তারা সুযোগ কাজে লাগিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল করেছে ও গণমাধ্যমে প্রকাশ করেছে। এতে করে আমার সম্মান ক্ষুন্ন হয়েছে।
ভুক্তভোগি তাসফির আহমেদ নিলয় দাবি করেন ভাইরাল হওয়া ভিডিও তে তিনি ছিলেন। নিয়ল বলেন, ঘটনার দিন আমরা পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করি। সে মোতাবেক পুতা দিয়ে দেওয়াল ভেঙে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি। এই বিষয়টি মামা টের পেয়ে যান। পরে তিনি অন্য সবাইকে কিছু বলেনি, তবে আমাকে শাসন করেছেন। তিনি তো আমার আত্মীয় যে কারণে তিনি আমাকে অনেক কিছু বলতে পারেন। এই ঘটনার আরও প্রায় তিন মাস আগের। আমি এখান থেকে রিলিজ পেয়েছি এক মাস আগে। তবে তিন মাস আগের ভিডিও নিয়ে এখন কেন প্রচার করা হচ্ছে, সংবাদ প্রকাশিত হচ্ছে ? তাছাড়া আগামী এক মাস পরে আমি দেশের বাহিরে চলে যাবো। এমতাবস্থায় আমার ও আমার পরিবার সদস্যদের সম্মান ক্ষুন্ন হচ্ছে। মূলত এই সেন্টারের বিরুদ্ধে শত্রু তৈরি হয়েছে। তারা এ ধরনের কাজ করাচ্ছে। আমি তাদের শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
আরেক ভুক্তভোগি হৃদয় বলেন, এখানে অনেক সুযোগ সুবিধা রয়েছে। এখানে আমি যতদিন ছিলাম, কাউকে কখনো মারধর করতে দেখিনি। তবে ঘটনার দিন আমরা তিন জন পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করে সেই মোতাবেক চেষ্টা করেছি। আমরা এটা অপরাধ করেছি। ওই দিন তিন তলা থেকে পড়ে গিয়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারতো। যাইহোক এখানে থাকাকালীন সময়ে আমাদের অভিভাবক চেয়ারম্যান স্যার। তিনি সেই অধিকারের জায়গা থেকে আমাদের শাসন করেছেন। আর আমরাও এই ঘটনার প্রতিবাদ করিনি কিংবা কোন অভিযোগ তুলিনি। তাহলে এটা নিয়ে কেন এতো প্রশ্ন উঠছে।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন ভবন মালিক, প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা সহ চিকিৎসা নিতে আসা যুবকদের অভিভাবকরা।
এর আগে, গত ৪ সেপ্টেম্বর ফতুল্লার পাগলার দক্ষিন নয়ামাটি এলাকায় অবস্থিত‘ চাঁদের আলো’ নামের মাদক নিরাময় ও পূর্ণ নির্বাসন কেন্দ্র এর একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। খন্ড খন্ড কয়েক মিনিটের ভিডিওতে দেখা যায়, নিরাময় কেন্দ্রের চেয়ারম্যান আক্তারুজ্জামান লাঠি হাতে কয়েকজন যুবককে নির্দেশ দিচ্ছেন অপর এক যুবককে বেডে শোয়ানোর জন্য। তখন যুবকটি বলে আমাকে জোর করতে হবে না। আমি নিজেই শোব। এক পর্যায়ে যুবকরা যুবকটিকে জোর করে বেডে শোয়ায়। তখন তার হাত পা চেপে ধরে রাখে যুবকরা। যুবকটি কান্নাকাটি শুরু করেন। পরে সাদা লুঙ্গি ও সাদা গেঞ্জি পরিহিত আক্তারুজ্জামান নিজেই লাঠি দিয়ে যুবকটিকে পেটাতে থাকেন। এ সময় যুবকটি চিৎকার করতে থাকে।