নারায়ণগঞ্জের মেধাবী ছাত্র তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যার ঘটনায় ত্বকীকে অপহরণ, হত্যা ও লাশ গুম করার স্থান পরিদর্শন করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)-১১ এর তদন্ত টিম।
বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সকালে শহরের আল্লামা ইকবাল রোড এলাকার আজমেরী ওসমানের তৎকালীন উইনার ফ্যাশন নামের টর্চার সেল ও শীতলক্ষ্যা নদীর কুমুদিনী শাখা খাল এলাকা পরিদর্শন করেন তারা। এ সময় রিমান্ডে থাকা আসামি শাফায়েত হোসেন শিপনকে নিয়ে এসব এলাকা পরিদর্শন করেন।
বিকেলে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন র্যাব-১১ এর সহকারী পরিচালক রিজওয়ান সাঈদ জিকু।
পরিদর্শন শেষে র্যাব-১১ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল তানভীর মাহমুদ পাশা গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এই মামলাটির তদন্ত আমরা করছি। সম্প্রতি এই মামলায় পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে একজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন এবং অন্যদের জিজ্ঞাসাবাদে বেশ কিছু তথ্য পাওয়া গেছে।
তিনি আরও বলেন, আজকে আমরা বেশ কিছু স্থান পরিদর্শন করেছি। ত্বকীকে অপহরণ করে যেখানে হত্যা করা হয় এবং লাশ ফেলে দেওয়া সহ লাশ উদ্ধারের স্থান তদন্তের স্বার্থে পরিদর্শন করেছি। আশা করছি, আমরা খুব দ্রুত সুষ্ঠু রিপোর্ট দিতে পারবো। এ সময় আরও পরিদর্শন করেন র্যাব-১১ এর মেজর অনাবিল ইমাম, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শাহাবুদ্দিন ও র্যাব-১১–এর মিডিয়া কর্মকর্তা সনদ বড়ুয়া।
এর আগে, এই হত্যা মামলায় ৫ জনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-১১। গত ১৬ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাঢ়া এলাকা হতে ইয়ার মোহাম্মদ ওরফে পারভেজকে গ্রেফতার করা হয়। গত ৮ ও ৯ সেপ্টেম্বর শাফায়েত হোসেন শিপন, মামুন মিয়া ও কাজল হাওলাদার কে গ্রেফতার করা হয়। পরে তাদের রিমান্ডে নেওয়া হয়। পরে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন কাজল হাওলাদার। বাকি আসামিদের ফের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।
এদিকে, গত ১১ সেপ্টেম্বর ঢাকার মিরপুর থেকে হত্যায় অভিযুক্ত আজমেরী ওসমানের সাবেক গাড়িচালক জামশেদ শেখকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-১১। জামশেদ এখনও র্যাবের রিমান্ডে রয়েছেন।
প্রসঙ্গত , ২০১৩ সালের ৬ মার্চ নগরের শায়েস্তা খাঁ রোডের বাসা থেকে বের হওয়ার পর নিখোঁজ হয় তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী। দুই দিন পর ৮ মার্চ শীতলক্ষ্যা নদীর কুমুদিনী খাল থেকে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। সেই রাতেই নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় দণ্ডবিধি ৩০২/৩৪ ধারায় আসামি অজ্ঞাত উল্লেখ করে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। মামলাটির তদন্ত প্রথমে পুলিশ এবং পরে উচ্চ আদালতের নির্দেশে র্যাবের ওপর ন্যস্ত হয়। র্যাব ওই বছরের ২৯ জুলাই ইউসুফ হোসেন লিটন এবং ১২ নভেম্বর সুলতান শওকত ভ্রমর নামে দুজন অভিযুক্তের ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি গ্রহণ করে। জবানবন্দিতে তারা জানান, আজমেরী ওসমানের নেতৃত্বে ত্বকীকে অপহরণের পর হত্যা করা হয়।
৫ মার্চ ২০১৪ তদন্তকারী সংস্থা র্যাব সংবাদ সম্মেলন করে জানায়, নারায়ণগঞ্জের ওসমান পরিবারের নির্দেশে তাদেরই টর্চার সেলে ১১ জন মিলে ত্বকীকে হত্যা করেছে।
উল্লেখ্য, আজমেরী ওসমান নারায়ণগঞ্জের আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমান এবং জাতীয় পার্টির সাবেক সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানের ভাতিজা।