নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়ে সেলিম প্রধান বলেন, ‘ওদের ভয়ে কেউ নির্বাচনে আসে না’

আসন্ন উপজেলা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন আলোচিত সেলিম প্রধান। সোমবার (১৮ মার্চ) বিকেলে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার ভিংরাবো এলাকায় একটি স্কুল পরিদর্শন শেষে তিনি এ ঘোষণা দেন। এ সময় তিনি নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজী ও তার অনুসারীদের নানা কর্মকাণ্ড নিয়ে সমালোচনা করেন।

রূপগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়ে জাপান-বাংলাদেশ সিকিউরিটি প্রিন্টিং পেপার্সের চেয়ারম্যান সেলিম প্রধান বলেন, রূপগঞ্জে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে ভয়ে কেউ নির্বাচন করতে আসেনা। তাই আমি চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করবো। আমি নির্বাচনে নামতে বাধ্য হচ্ছি। কারণ আমি ওয়াদা করেছি রূপগঞ্জকে পরিষ্কার করে ছাড়বো। এখানে আমরা সকলে একটা পরিবার। আমার পরিবারের গায়ে হাত দিবে, এটা হতে পারে না। ভালো মানুষগুলো সন্ত্রাসীদের ভয়ে নির্বাচনে আসতে চায়না, কেউ নির্বাচনে আসতে চায় না। এমপি সাহেবের (সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজী) পাশে থাকা পিএস- এপিএসরা এসব সন্ত্রাসী লালন-পালন করে।

সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজীর সমালোচনা করে তিনি বলেন, গাজী সাহেবের (সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজী) ট্যাংকি গাজী পরিবারের ট্যাংকি ভরে গেছে, আর জায়গা খালি নেই। বাবা করেছে এমপি নির্বাচন ছেলে আসছে উপজেলা নির্বাচন করতে, এরপরে ছেলের বউ আসবে পৌরসভার মেয়র নির্বাচন করতে। অথচ তারা রূপগঞ্জের কেউ না; তাদের বাড়ি রূপগঞ্জে না, তাদের জন্মস্থান রূপগঞ্জ না। তারা পুরো পরিবার মিলে এখানে এসেছে জমি দখল করতে আর ট্যাংকি ভরতে। 

এমপি গাজী বহিরাগতদের কোটিপতি বানিয়েছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, গাজী সাহেব বাহির থেকে রূপগঞ্জে লোক নিয়ে এসে কোটিপতি বানিয়েছে, আর তাদের হাতে তরোয়াল ধরিয়ে দিয়েছে। সন্ত্রাসী বাহিনী তৈরি করেছে। এছাড়া জনগণের টাকায় গাজী সেতু, গাজী অডিটোরিয়াম সহ নানা কিছু তৈরি করেছে। অথচ একটা ব্রিজও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান বা তার পরিবারের সদস্যদের নামে করা হয়নি।

 হত্যার হুমকি দেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, একদল সন্ত্রাসী কথাায় কথায় আমাদের মারার হুমকি দেয়, কবরে পাঠিয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়, কাফনের কাপড় পাঠিয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়। তাই সরকার এবং প্রশাসনকে আমাদের পাশে থাকার অনুরোধ করছি। আমি রূপগঞ্জবাসীর পাশে আছি। এখানে আর চাঁদাবাজি চলবে না, মাদক চলবে না। রূপগঞ্জবাসী আর ভুল করবে না। সন্ত্রাসী চাঁদাবাজদের আর ভোট দেবে না। আমি নির্বাচনে জয় লাভ করতে পারলে জাপানের মত রূপগঞ্জকে পরিষ্কার করবো।

সন্ত্রাসীদের প্রতিহত করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে তিনি বলেন, আমার চেয়ারম্যান নির্বাচন করার কোন ইচ্ছে ছিলনা। কিন্তু আমার রূপগঞ্জবাসীকে বাঁচাতে হলে আমাকে নির্বাচন করতে হবে। তাদের ভয়ে কেউ নির্বাচনে আসতে চায়না। সম্প্রতি গাউছিয়া মার্কেটে হকার ইস্যুতে এখানকার ইউনিয়ন চেয়ারম্যানের সাথে পুলিশের একটা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। সেই দুর্ঘটনার জন্য প্রশাসনের লোকজন দু:খ প্রকাশ করেছেন। এরপরেও কিশোর গ্যাং ও সন্ত্রাসীরা পুলিশ ফাঁড়িতে ঢিল মেরেছে। প্রশাসনের ভাইদের অনুরোধ করবো, এসব সন্ত্রাসীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হোক, যাতে করে সকল সন্ত্রাসীরা ভয় পায়। আর যদি তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হয়, তাহলে ওরা আরো প্রশ্রয় পেয়ে বেপরোয়া হয়ে যাবে। এসব সন্ত্রাসীদের হাত থেকে আমার রূপগঞ্জকে বাঁচাতে হলে আমাকে নির্বাচন করতে হবে।

প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী ও স্কুলের শিক্ষকদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আমি তোমাদের সাথে আছি। তোমরা সবাই আমাদের পরিবার। আমি তোমাদের-ই একজন। আমাকে তোমরা বন্ধু মনে করবে। আমি তোমাদের বন্ধু হয়ে পাশে থাকতে চাই। রূপগঞ্জবাসীকে সন্ত্রাসীদের হাত থেকে মুক্ত না করার পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের তৈরি ফুল ও মালা আমার কাছে থাকবে।

 এ সময় তিনি রূপগঞ্জের ভিংরাবো এলাকায় অবস্থিত অনির্বাণ ডিজেবল চাইল্ড কেয়ার স্কুল অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টার নামের একটি স্কুলের প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের সহায়তার জন্য এক লাখ টাকা প্রদান করেন। এছাড়া তাদের পাশে থাকার আশ্বাস দেন।

প্রসঙ্গত, আগামী ১১ মে দ্বিতীয় ধাপে রূপগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। সেই নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজীর পুত্র পাপ্পা গাজীর নাম শোনা যাচ্ছে। পুরো রূপগঞ্জ উপজেলা জুড়ে তার ছবি দিয়ে পোষ্টার সাটানো হয়েছে।