যে কারণে তৈমুরের ভরাডুবি

তৈমুর গাজী
তৈমুর গাজী

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির উপর ভর করে নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসন থেকে বিজয়ী হতে চেয়েছিলেন তৃণমূল বিএনপির মহাসচিব তৈমুর আলম খন্দকার। যে কারণে তিনি বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি সহ দলটির নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবি করে আসছেন। এমনকি তার দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপি নেতাকর্মী বিরুদ্ধে ধরপাকড় বন্ধ রয়েছে তিনি দাবি করেন। তবে এতো কিছু করেও শেষ রক্ষা হয়নি। গত ৭ জানুয়ারি ভোটের লড়াইয়ে নেমে মাত্র ৩ হাজার ১৯০ ভোট পেয়ে পরাজিত হয়েছেন তৃণমূল বিএনপির মহাসচিব তৈমুর আলম খন্দকার। তার সাথে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এবং বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী ১ লাখ ৫৬ হাজার ৪৮৩ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। ফলে তাদের ভোটের ব্যবধান বিশাল। 

অথচ মাত্র কয়েক বছর আগে ২০২২ সালে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপেরেশন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে ৯২ হাজার ৫৬২ ভোট পেয়েছিলেন তিনি। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী ১ লাখ ৫৯ হাজার ৯৭ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তাহলে এবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মন্ত্রী গাজীর সাথে তার পরাজয়ের ব্যবধান এতো বেশি হওয়ার কারণ কি ছিল। এ নিয়ে সবার মনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।  

এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী গোলাম দস্তগীর গাজী ১ লাখ ৫৬ হাজার ৪৮৩ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী কেটলি প্রতীকে মো. শাহজাহান ভূঁইয়া পেয়েছেন ৪৫ হাজার ৭৫ ভোট। বিজয়ী প্রার্থীর সঙ্গে তৈমুরের ব্যবধান এক লাখ ৫৩ হাজার ২৯৩ ভোটের।  

বিধান অনুযায়ী, মোট প্রদত্ত ভোটের অন্তত সাড়ে ১২ শতাংশ ভোট না পেলে প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়। এই আসনে ৩ লাখ ৮৫ হাজার ৬১৬ ভোটারের মধ্যে ২ লাখ ১২ হাজার ৬২৪ জন ভোটার ভোট দিয়েছেন। সেই হিসাবে জামানত বাঁচাতে তার প্রয়োজন ছিল অন্তত ২৬ হাজার ৫৭৮ ভোটের।  এদিকে নির্বাচনে ভরাডুবির বিষয়ে জানতে চাইলে অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার বলেন, সরকার কিভাবে নির্বাচন করল, আমরা প্রমাণপত্রসহ ডিটেইলস তুলে ধরব। নির্বাচনের সময় কী হয়েছে না হয়েছে সব তুলে ধরব। দুই-তিন দিনের মধ্যে আমরা দলের পক্ষ থেকে বক্তব্য দেব।

স্থানীয় ও দলীয় সূত্র বলছে, জনগণের ভোট টানতে নানা কৌশল অবলম্বন করেছিলেন তৈমুর আলম খন্দকার। তিনি নিজেকে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ উভয় দলের জন্য নিরাপদ বলে দাবি করছেন। এছাড়া ভূমিদস্যু, মাদক ও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে তার অবস্থান রয়েছে উল্লেখ করে ভোটারদের ভোট টানতে চেষ্টা করেছেন। আর স্থানীয় পর্যায়ে বিএনপি দলের নেতাকর্মীদের ভোট টানতে বিএনপি দলের নেতাকর্মীদের অহেতুক হয়রানি ও ধরপাকড় বন্ধের দাবি জানিয়েছেন। এছাড়া বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিও করেন তার নির্বাচনী প্রচারণার সময় সাংবাদিকদের দেওয়া সাক্ষাতকারে। তার নির্বাচনী প্রচার প্রচারণায় বিএনপির অনেক নেতাকর্মীকে তার আশে পাশে দেখা গেছে। তারা প্রকাশ্যে তৈমুরের পক্ষে নির্বাচনী কাজে নেমেছিলেন। 

ওই সময় বিএনপির নেতাকর্মীদের নিয়ে নির্বাচনী মাঠে প্রচার-প্রচারণা চালানোর বিষয়ে তৈমুর আলম খন্দকার বলেন, বিএনপি ও তৃণমূল বিএনপির মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। বিএনপির নেতাকর্মীরা আমার সাথে হাটছে, তারা আমার পক্ষে নির্বাচনে কাজ করছে। আজকে রূপগঞ্জে বিএনপির নেতাকর্মী ধরপাকড় বন্ধ রয়েছে আমার জন্য। আমার দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এটা হয়েছে।

এদিকে, গত ২৯ ডিসেম্বর জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে তৃণমূল বিএনপির মহাসচিব ও নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনের প্রার্থী অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার সহ দলটির চেয়ারপারসন শমসের মোবিন চৌধুরী কে বেঈমান আখ্যা দিয়েছেন দলটির ৬০ জন প্রার্থী। অভিযোগ করে বলেন, তৃণমূল বিএনপির প্রার্থীদের নির্বাচনী মাঠে নামিয়ে যোগাযোগ বন্ধ রাখা ও নির্বাচনী বিশেষ ফান্ডের টাকা আত্মসাত করার অভিযোগ করা হয়। তবে তৈমুর আলম খন্দকার এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। এর আগে, তৃণমূল বিএনপিতে যোগদানের সময়ে বিএনপি দলের নেতাকর্মীরা তাকে বেঈমান হিসেবে সম্মোধন করে সহ নানা সমালোচনা করেছেন। ফলে বিএনপি দলটির বড় অংশের ভোট তার বাক্সে পড়েনি।

ফলে এই নেতা তৃণমূল বিএনপি ও বিএনপির একটি বড় অংশের ভোট থেকে বঞ্চিত হয়েছে। তাছাড়া তৃণমূল বিএনপি নতুন করে গঠিত হওয়ার ফলে এখনো সেভাবে সাংগঠনিকভবে শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করতে পারেনি। যেকারণে তার ভোট ব্যাংক তৈরি হয়নি। আর আওয়ামী লীগ ও এ্যান্টি আওয়ামী লীগের ভোট নৌকা প্রতীকের মন্ত্রী গাজীর বাক্সে  এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে রূপগঞ্জ উ্পজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান ভূইয়ার বাক্সে পড়েছে। ফলে তৈমুর আলমের এক সময়ের বিএনপির একনিষ্ঠ কর্মী ও নিজের আত্নীয় স্বজনদের ভোট পেয়েছেন তিনি।