‘আমার ছেলে এক মাস পর পর ছুটিতে বাড়িতে আসতো। কিন্তু গত দুই মাস ধরে সে বাড়িতে আসেনি। ছেলে বলেছেন, ওর সাথের অফিসার চার জন ছুটিতে গেছে। ওরা ফিরে এলে রমজানের আগে বেশিদিন ছুটি কাটিয়ে যাবে বলেছিল। রমজানের আগে ছুটিতে আমার ছেলের আর আসা হলোনা। লাশ হয়ে ফিরল। এখন আমাকে আম্মু বলে কে ডাকবে। আমি কাকে নিয়ে বাঁচবো।’
রাজধানীর বেইলি রোডের আগুনে প্রাণ হারানো নারায়ণগঞ্জের শান্ত হোসেনের মা লিপি আক্তার কান্না জনিত কণ্ঠে এ কথাগুলো বলছিলেন। শান্ত হোসেন নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা ভূঁইগড় পশ্চিমপাড়া এলাকার মো. আমজাদ হোসেনের ছেলে।
মৃত্যুর আগে মায়ের সাথে শান্তর কথা হয়েছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, গতকাল রাতে আমার ছেলে হঠাৎ করে ভিডিও কল দিয়েছে। এমনিতে সে সচরাচর আমাকে ভিডিও কল দেয় না, অডিও কল দেয়। ভিডিও কলে সে আমাকে জিজ্ঞেস করে আম্মু কি খেয়েছো। এসব বলে সবার খোঁজখবর নিয়েছে। এর কিছুক্ষণ পরে ছোট ছেলের কাছে শুনি আমার ছেলে শান্তর প্রতিষ্ঠানে আগুন লেগেছে।এরপর তার মৃত্যুর খবর পাই।
শবেবরাতের রাতে বাসায় এসে নামাজ পড়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, শবেবরাতের আগে একদিন ফোন করে শবেবরাতের রাতে বাসায় এসে সবার সাথে নামাজ পড়বে বলে জানায়। এই অল্প সময়ের জন্য বাসায় আসতে আমি নিষেধ করেছি। এরপরও সে শবেবরাতের রাতে এসে এখানে নামাজ পরেছে। পরের দিন সকালে চলে গেছে। এটাই ছিল শেষ দেখা।
পরিবারের দায়িত্ব নেওয়ার জন্য পড়ালেখা ছেড়ে শান্ত চাকরিতে যোগ করেছে উল্লেখ করে লিপি আক্তার বলেন, আমার ছেলে সবসময় হাসি-খুশি থাকতো। পরিবারের দায়িত্ব নেওয়ার জন্য পড়ালেখা ছেড়ে দিয়ে চাকরিতে যোগ দেয়। তার বাবার পাশাপাশি সে সংসারের খরচ যোগাত। ভাই-বোনের পড়ালেখার খরচ বহন করতো। আমার ছেলে আমাদের ছেড়ে চলে গেছে। আমি এখন কাকে নিয়ে বাঁচবো। আমাকে কে স্বপ্ন দেখাবে। তার বাবাও শেষবারের মতো ছেলেকে দেখার সুযোগ পেলো না।
জানা গেছে, শান্ত হোসেন নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা ভূঁইগড় পশ্চিমপাড়া এলাকার মো. আমজাদ হোসেনের ছেলে। তিনি বেইলি রোডে গ্রিন কজি কটেজ ভবনের অথেল বার অ্যান্ড জুস নামের একটি রেস্তোরাঁয় গত ৭ মাস ধরে সহকারী সেফ হিসেবে চাকরি করতেন। তারা দুই ভাই এক বোন। বাবা সৌদি আরব থাকেন। তবে তিনি বিদেশে তেমন সুবিধে করতে না পারায় পরিবারের বড় ছেলে হিসেবে শান্তই সংসারের খরচ বহন করতেন। এ কারণে তিনি উচ্চমাধ্যমিকের গণ্ডি পার হতে পারেননি।
দুপুরে নিহত শান্ত হোসেনের লাশ নিজ গ্রামের বাড়িতে আনা হয়। সেখানে জানাজার নামাজ শেষে স্থানীয় কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার রাত ১০টায় বেইলি রোডে একটি বহুতল ভবনে আগুন লাগে। এতে এখন পর্যন্ত ৪৬ জনের মৃত্যু হয়েছে।