শামীম ওসমানের হুঁশিয়ারীতেও থামেনি বিএনপির তাণ্ডব

সম্প্রতি বিএনপি-জামায়াতের অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর সহ হামলার ঘটনা নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেছেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের প্রভাবশালী সংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমান। সমালোচনার এক পর্যায়ে নারায়ণগঞ্জ বিএনপি-জামায়াতকে হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করে থামতে বলেছেন। এমনকি বিএনপি-জামায়াতকে নারায়ণগঞ্জ থেকে পরিষ্কার করতে ১০ মিনিট সময় লাগবে বলে হুংকার দিয়েছেন তিনি। তবে এই সংসদ সদস্যের হুংকার ও হুঁশিয়ারী সত্ত্বেও থেমে নেই বিএনপি নেতাকর্মীদের তাণ্ডব। নারায়ণগঞ্জে একের পর এক অগ্নিসংযোগ, ককটেল বিস্ফোরণ, গাড়ি ভাঙচুর সহ পুলিশের সাথে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে চলেছে। এতে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ‘বিএনপি দলের নেতাকর্মীরা কার্যত অর্থে এমপি শামীম ওসমানের হুঁশিয়ারীকে তোয়াক্কা না করে ড্যামকেয়ার মুডে দলীয় নির্দেশনা অনুযায়ী কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছেন। 

বিএনপি দলটি সারাদেশে হরতাল ও অবরোধ কর্মসূচির ডাক দিলে নারায়ণগঞ্জের সড়ক ও মহাসড়কে অগ্নিসংযোগ, গাড়ি ভাঙচুর সহ পুলিশের সাথে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। কোথাও কোথাও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনাও ঘটেছে। হরতালের দিন থেকে নারায়ণগঞ্জে তাণ্ডব চালায় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। পরে একদিন বিরতি দিয়ে ৩১ অক্টোবর থেকে টানা তিন দিনের অবরোধ কর্মসূচি দেয় বিএনপি দলটি। অবরোধের সময়েও একই চিত্র দেখা যায়। 

এদিকে নারায়ণগঞ্জে বিএনপি-জামায়াতের তাণ্ডব থামাতে হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করেছেন আওয়ামী লীগের আলোচিত নেতা ও প্রভাবশালী সংসদ সদস্য শামীম ওসমান। বুধবার (১ নভেম্বর) বিকেলে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের নাসিম ওসমান মেমোরিয়াল পার্কে আওয়ামী লীগের এক প্রস্তুতি সভায় বিএনপি-জামায়াতকে উদ্দেশ্য করে শামীম ওসমান আরও বলেন, বিএনপি-জামায়াতকে বলতে চাই। নারায়ণগঞ্জে যেটুকু করেছেন এনাফ, আর কইরেন না। জনগণ যদি আপনার বাসায় গিয়ে আক্রমণ করে, তখন কি করবেন। আপনি জনগণের সম্পত্তি নষ্ট করবেন, মহিলাদের ব্লাউজ খুলে ফেলবেন, পুলিশকে মারবেন, গাড়িতে আগুন দিবেন- এখন জনগণ যদি ক্ষেপে গিয়ে আপনার বাড়ি-ঘরে হামলা দেয়। নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগের মেক্সিমাম (সর্বোচ্চ) ১০ মিনিট সময় লাগে আপনাদের ক্লিয়ার করতে। ওতো শক্তিশালী আপনারা না। আমরা ধৈর্য ধরেছি পুলিশও ধৈর্য ধরছে। 

আড়াইহাজারে পুলিশের ওপরে হামলার ঘটনার প্রসঙ্গ তুলে ধরে শামীম ওসমান বলেন, আড়াইহাজারে পুলিশকে কোপানো হলো। কিছু মানুষ তাকে ভ্যানগাড়িতে তুলে দেয়। তারপরও ওই পুলিশকে মারা হলো। আমি প্রশাসনকে ধন্যবাদ দেই, আপনারা ধৈর্য্য ধরেছেন। বিএনপি এখনই মৃত পুলিশকে চাপাতি দিয়ে কোপায়, আর ক্ষমতায় আসলে তারা কী করবে?

সংশ্লিষ্টরা বলছেন,  সংসদ সদস্য  শামীম ওসমানের এমন হুঁশিয়ারীকে তোয়াক্কা না করে অবরোধের তৃতীয় দিনেও ফের আগুন জ্বালিয়ে ও ককটেল বিস্ফোরণ করেছে বিএনপির নেতাকর্মীরা। এছাড়া সড়কে বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করেছে অবরোধকারীরা। এমনকি নাশকতার মামলায় একের পর এক বিএনপির নেতাকর্মীরা গ্রেফতার হলেও তারা থেমে নেই। একইভাবে দ্বিতীয় দফায় বিএনপির ডাকা অবরোধের প্রথম দিনে ফের তাণ্ডব চালিয়েছে দলটির নেতাকর্মীরা। এতে স্পষ্ট যে, বিএনপি দলটি শামীম ওসমানের হুঁশিয়ারীকে ড্যামকেয়ার করে চলছে। 

বিএনপি দলীয় নেতকর্মীরা বলছেন, এই মুহূর্তে এমপি-মন্ত্রী সহ কোন ক্ষমতাধরের কথায় বিএনপির তৃণমূল কর্ণপাত করবেনা। কারও হুংকারে বিএনপির নেতাকর্মীরা ভয় পাবেনা। হামলা-মামলা ও গ্রেফতারের ঘটনা সত্ত্বেও তারা দমে যায়নি। একমাত্র দলের হাইকমান্ডের নির্দেশনাতে দলের নেতাকর্মীরা থামাতে পারে। এছাড়া কোন কিছুতেই তারা দমে যাবেনা। আন্দোলন কর্মসূচি চলছে চলবে। 

এখানে উল্লেখ্য যে, দীর্ঘদিন পর গত ২৯ অক্টোবর সারা দেশে হরতালের ডাক দেয় বিএনপি দলটি। তাদের সাথে তাল মিলিয়ে জামায়াতে ইসলাম দলটি হরতালের ডাক দিয়েছে। সেই ডাকে সাড়া দিয়ে নারায়ণগঞ্জে বিএনপির নেতাকর্মীরা সড়কে নেমেছে। হরতালের দিন রবিবার (২৯ অক্টোবর) সকালে নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাঢ়া বালুর মাঠ এলাকায় মিছিল নিয়ে জড় হয় মহানগর ও যুবদল বিএনপির নেতাকর্মীরা। এ সময় পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতাকর্মীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া সহ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। বিএনপির নেতাকর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট পাটকেল ছুড়ে মারে। পরিস্থিতি শান্ত করতে পুলিশ তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়েছে। এতে একজন পুলিশ সহ অন্তত ৯ জন আহত হয়েছেন। ওই দিন সকালে শহরের মিশনপাড়া এলাকায় একটি যাত্রীবাহী বাসে আগুন ও আরেকটি বাস ভাঙচুর করা হয়েছে। এছাড়া আড়াইহাজার উপজেলায় বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। 

পরে ৩১ অক্টোবর থেকে টানা তিন দিন অবরোধের ডাক দেয় বিএনপি দলটি। অবরোধের প্রথম দিন সকালে আড়াইহাজার উপজেলায় মহাসড়ক অবরোধ করতে গেলে তাতে বাধা দেয় পুলিশ। সেখানে বিএনপির সঙ্গে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের ত্রিমুখি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে  কুপিয়ে ও ইটের আঘাতে তিন জন পুলিশ সদস্য সহ অন্তত ২৩ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। 

অবরোধের দ্বিতীয় দিনে বুধবার (১ নভেম্বর) সকালে নারায়ণগঞ্জের তিন মহাসড়কে (ঢাকা-চট্টগ্রাম-সিলেট ও এশিয়ান হাইওয়ে) অগ্নিসংযোগ সহ তিনটি গাড়ি ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে। একইভাবে অবরোধের তৃতীয় দিন বৃহস্পতিবার (২ নভেম্বর) সকালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ের বিভিন্ন স্থানে আগুন জ্বালিয়ে ও ককটেল বিস্ফোরণ করেছে বিএনপির নেতাকর্মীরা। এছাড়া সড়কে বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করেছে অবরোধকারীরা। এ সময় সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সাবেক যুগ্ম-আহ্বায়ক টিএইচ তোফাসহ তিন জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এসব ঘটনায় নাশকতার অভিযোগ তুলে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে জেলার প্রায় সবকটি থানায় ধারাবাহিকভাবে মামলা হয়েছে। 

মধ্যেখানে দুই দিন বিরতি দিয়ে বিএনপি দলটি ফের অবরোধের ডাক দেয়। অবরোধ শুরুর আগের দিন শনিবার (৪ নভেম্বর) রাতে নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকায় অনাবিল বাসে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। রবিবার (৫ নভেম্বর) অবরোধের প্রথম দিনে জেলার বিভিন্ন স্থানে টায়ার জ্বালিয়ে ও অগ্নিসংযোগ করে সড়ক অবরোধ করেছে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এমনকি ঝটিকা মিছিল বের করেছে নেতাকর্মীরা। এছাড়া ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ককটেল বিস্ফোরণ সহ বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। আর এশিয়ার হাইওয়ে এবং ঢাকা-সিলেট মহাসড়কেও টায়ার জ্বালিয়ে ও অগ্নিসংযোগ করে অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছে দলের নেতাকর্মীরা।