স্টাফ রিপোর্টার :
ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে জনপ্রতি ১৫-২০ টাকা ভাড়ায় ট্রেনে যাতায়াত করতো হাজার হাজার যাত্রী। তবে দীর্ঘ সাড়ে সাত মাস ধরে ট্রেন সার্ভিসটি বন্ধ থাকার ফলে প্রায় চারগুণ বেশি ভাড়া দিয়ে বাসে করে যাতায়াত করতে হচ্ছে যাত্রীদের। এতে করে ভোগান্তিতে পড়েছে যাত্রীরা।
নারায়ণগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশন সূত্রে জানা গেছে, গত ৪ ডিসেম্বর পদ্মা সেতুর রেল সংযোগ ও ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রেলপথ উন্নয়ন প্রকল্পের কাজের জন্য অনির্দিষ্টকালের জন্য এ রুটে রেল চলাচল বন্ধ ঘোষণা করে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। সেতুর রেল সংযোগ সড়কের কাজ শেষ দিকে রয়েছে বলে জানাগেছে। তবে কবে নাগাদ নারায়ণগঞ্জ রুটে রেলওয়ে সার্ভিসটি চালু করা হবে তা নিশ্চিত করে বলতে পারছেনা কর্মকর্তারা।
নারায়ণগঞ্জ রেল স্টেশন ঘুরে দেখা যায়, ট্রেনের প্লাটফর্মের দুপাশে দীর্ঘ সারিতে ফাঁকা পড়ে আছে রেল লাইনগুলো, তবে কোন ট্রেন নেই। স্টেশনের প্লাটফর্মে গুটি কয়েক লোক বসে বসে অবসর সময় পার করছে। চা-পান সহ ভ্যারাইটিজ আইটেমের দোকানগুলো সচল রয়েছে। তবে আগের তুলনায় ক্রেতা অনেকাংশে কমেছে।
স্টেশনের প্লাটফর্মে ভ্যারাইটিজ পণ্যের দোকান খুলে বসেছেন আইয়ুব আলী। তিনি বলেন, ট্রেন সার্ভিস বন্ধ হলেও অনেক যাত্রী এসে ফিরে যায়। ট্রেন সার্ভিস বন্ধের কথা অনেক যাত্রী জানেনা। অথচ এক সময় ট্রেন যাত্রী দিয়ে পুরো প্লাটফর্ম জমজমাট থাকতো। তখন দোকানে বেচা-বিক্রি বেশি হতো। আর এখন বেচা-বিক্রি অনেক কমে গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে ট্রেন ভাড়া ১৫ টাকা এবং ডেমো ট্রেনের ভাড়া টিকিট প্রতি ২০ টাকা আদায় করতো হতো। অথচ একই রুটে বাস ভাড়া প্রায় চারগুণ বেশি। নন এসি বাসে জন প্রতি টিকিট ৫৫ টাকা এবং এসি বাসের ভাড়া ৮০ টাকা করে রাখা হচ্ছে।
নারায়ণগঞ্জ যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ ফোরামের তথ্য অনুযায়ী, এই রুটে কম ভাড়া ও সময় সাশ্রয়ের ফলে এ বাহনকে বেছে নিয়েছে যাত্রীদের একটা বড় অংশ। দৈনিক নারায়ণগঞ্জ থেকে ট্রেনে প্রায় ২৫-৩৫ হাজার যাত্রী যাতায়াত করতো। সেই যাত্রীদের বিশাল অংশ এবার বাসে ও বিভিন্ন পরিবহনের করে যেতে হবে। নিম্ন ও মধ্যবিত্ত আয়ের যাত্রীরা সাধারণত ট্রেন সার্ভিস গ্রহণ করে থাকে। ফলে এই যাত্রীদের ৪ গুণ ভাড়া বেশি গুণতে হবে।
যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ ফোরামের আহবায়ক রফিউর রাব্বি বলেন, রেল কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণে এই সার্ভিস চালু হতে বিলম্ব হচ্ছে। যেখানে প্রতিদিন ২৫-৩৫ হাজার যাত্রী নিয়মিত যাতায়াত করে থাকে, সেখানে যাত্রী দুর্ভোগ হচ্ছে তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। একারণে রেল সার্ভিস বন্ধ করার সময়ে আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে শিঘ্রই রেল সার্ভিস চালু করার দাবি জানিয়ে আসছি।
নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় রেলওয়ে স্টেশনের মাস্টার কামরুল ইসলাম বলেন, ডিসেম্বর থেকে এই রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। পদ্মা সেতুর রেল সংযোগ কাজের জন্য এই সার্ভিস বন্ধ রাখা হয়েছে। কাজ সম্পন্ন হলে খুব শিঘ্রই ট্রেন সার্ভিস চালু করা হবে।
তিনি আরও বলেন, প্রতিদিন ৮টি করে মোট ১৬টি ট্রেন এই রুটে চলাচল করতো। দৈনিক ১০ থেকে ১২ হাজার যাত্রী যাতায়াত করতো। তবে ঈদ ও বিভিন্ন উৎসবে যাত্রীর সংখ্যা স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি হতো।