স্টাফ রিপোর্টার :
২০২১ সালের ৮ জুলাই নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের গোলাকান্দাইল এলাকায় অবস্থিত সেজান জুস কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় একে একে ৫৪ জন পুড়ে মারা গেছে। স্বজনদের চোখের সামনে পুড়ে কয়লা হয়ে গেছে প্রিয়জনদের শরীর। সেই বেদনায় আজও চোখের জল ফেলে অনেকে। তবে দীর্ঘ দুই বছরেও মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে পারেনি সিআইডি। এতে করে নিহতের স্বজনদের আক্ষেপ আরও বেড়ে চলেছে।
অগ্নিকান্ডের দুই বছরেও হাশেম ফুডস কারখানায় অগ্নি নিরাপত্তা ও শ্রমিক নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়নি। কলকারখানা অধিদপ্তর কিংবা ফায়ার সার্ভিস কোথাও মেলেনি ছাড়পত্র। কারখানা কতৃপক্ষের দাবী, অগ্নি নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি। এক বছর পুর্বেও একই ধরণের মন্তব্য করেছিলো প্রতিষ্ঠানটি।
ভয়াবহ সেই অগ্নিকান্ডের দুই বছরেও মামলার কাজ সম্পন্ন করতে পারেনি তদন্তকারী সংস্থা সিআইডি। কবে নাগাদ সেই তদন্ত আদালতে জমা পরবে তা নিশ্চিত করতে পারেননি তারা। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডি পুলিশের পরিদর্শক মোকছেদুর রহমান বলেন, ‘ অনেকগুলোর মৃত্যুর ঘটনা৷ তদন্ত করতে একটু সময় লাগছে। শীঘ্রই প্রতিবেদন দেয়া যাবে।‘
নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্সের উপপরিচালক আলমগীর হোসেন বলেন, ‘হাশেম ফুডসকে এখনও ফায়ার সেফটির সনদ দেয়া হয়নি। সবশেষ পরিদর্শনে এর ভেতরে কিছু ত্রুটি পাই। সেই কারনে তাদের ছাড়পত্র দেয়া হয়নি। বর্তমানে ছাড়পত্র ছাড়াই কারখানা চলছে। ‘
কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের পরিদর্শক মেহেদী হাসান বলেন, ‘কারখানাটিকে আমাদের তরফ থেকে ছাড়পত্র দেয়া হয়নি। তারা ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করেছে। কিন্তু নির্ধারিত ক্রাইটেরিয়া পুরন করতে না পারায় তাদের ছাড়পত্র দেয়া হয়নি। ‘
এদিকে ছাড়পত্র ছাড়াই কারখানার উৎপাদন চালিয়ে যাবার বিষয়ে জানতে চাইলে কারখানাটির এজিএম (প্রশাসন) ক্যাপ্টেন (অবসরপ্রাপ্ত) মামুনুর রশিদ বলেন, আমরা ফায়ার সার্ভিসের নির্দেশনা অনুযায়ী ফায়ার সেইফটি নিশ্চিত করতে কাজ করছি। আশা করছি চলতি মাসেই এসব কাজ সম্পন্ন হবে। সবগুলো ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করা হয়েছে। আশা করছি অল্পদিনেই ছাড়পত্র পেয়ে যাব।
এদিকে দীর্ঘ দুই বছর পেরিয়ে গেলেও স্বজনরা বিচার পায়নি বলে আজও নিরবে নিবৃতে চোখের জল ফেলছে।
এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় একমাত্র মেয়ে শান্তামনির দেহ আগুনে পুড়ে কয়লা হয়েছে। দেখে চেনার উপায় ছিলনা, পরে ডিএনএ পরীক্ষা করে লাশ শনাক্ত করা হয়। শান্তামনির মা শিমু বেগম বলেন, ‘এখনো বিচার পাইনি, আর কবে পাব। সুষ্ঠু বিচার না পেলে নিহতের পরিবার সদস্যরা শান্তি পাবেনা।
প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের ৮ জুলাই বিকেলে রুপগঞ্জের কর্ণগোপ এলাকায় হাসেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজ কারখানার ১৪ নম্বর গুদামের ছয় তলা ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় তাৎক্ষণিক ভবন থেকে লাফিয়ে পরে তিন জন মারা যায়। এছাড়াও ফায়ার সার্ভিসের ১৮টি ইউনিট প্রায় ১৯ ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নেভায়। কিন্তু ততক্ষণে আগুনে পুড়ে ৪৮ শ্রমিকের মৃত্যু হয়।
এ ঘটনায় রূপগঞ্জ ভুলতা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক নাজিম উদ্দিন বাদী হয়ে কারখানার মালিক আবুল হাসেম সহ ৮ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত আরো কয়েকজনকে আসামি করে নিরাপত্তা না থাকা সহ বিভিন্ন অবহেলার অভিযোগ এনে রূপগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলায় কারখানার মালিক মো. আবুল হাসেম সহ তাঁর চার ছেলে (পরিচালক) ও ডিজিএম, এজিএম ও ইঞ্জিনিয়ার সহ ৮ জনকে আসামি করা হয়। পরে তাদের গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়। বর্তমানে তারা সবাই জামিনে আছেন।
পরবর্তীতে মামলাটি সিআইডির কাছে হস্তান্তর করা হয়। সিআইডির একটি টিম অভিযান চালিয়ে কারখানাটির তৃতীয় ও চতুর্থ তলা থেকে মাথার খুলি, চুল ও হাড় উদ্ধার করে। ডিএনএ পরীক্ষা করে সেখানে তিন জনের লাশ ছিল বলে পরিচয় শনাক্ত করেছে সিআইডির টিম।