হকারমুক্ত ও যানজট নিরসনে যা বললেন শামীম ওসমান

নারায়ণগঞ্জ শহর থেকে হকারমুক্ত ও যানজট নিরসনে নানা পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমান। শনিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের উদ্যোগে এক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন।

সড়কে গাড়ি রেখে যানজট সৃষ্টি করতে ‍উল্লেখ করে শামীম ওসমান বলেন, ‘  আমি শামীম ওসমান মনে হয় দুর্বল মানুষ। আমি শীতল পরিবহনের মালিক হয়ে আমি একটা জায়গা ভাড়া করেছি যেখানে গাড়ি রাখা হয়। অনেক টাকা ভাড়া গুণতে হয় আমাদেরকে। আমি শামীম ওসমান এমপি হওয়ার পরে গাড়ি রাখার জন্য জায়গা রেখে দিয়েছি আর অন্যরা এসে রাস্তায় গাড়ি রেখে দিচ্ছে। এটা আপনাদের দেখা উচিত। আমি আইন মেনে চলছি। আমার মনে হয় আমি এবং আইভী একমত, বিআরটিএর অনুমতি ছাড়া কোন গাড়ি চলাচল করতে দেওয়া হবেনা। আর বিআরটিএ এতোগুলো গাড়ির পারমিশন (অনুমতি) দিবেনা যতটুকুর এখানে প্রয়োজন নাই। অবশ্যই এখানে অগ্রাধিকার পাবেন নারায়ণগঞ্জে যারা বসবাসকারী আছেন, যারা নিজেরা ট্রান্সপোর্ট ব্যবসা করেন। অবশ্যই তাদেরকে আগে মূল্যায়ন করতে হবে। কারণ তারা আমাদের এলাকার মানুষ। 

বিআরটিএ’র সহকারী পরিচালককে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আইন অনুযায়ী অটোবাইক বা ব্যাটারীচালিত রিকশা চলাচলে সরকারের কোন অনুমতি নেই। কিন্তু আপনি বললেন এটা সিটি করপোরেশন পারমিশন দিতে পারে কিছু সংখ্যক। কালকে যদি সিটি করপোরেশন এটা পারমিশন দেয়, এই সিটি করপোরেশনের অযুহাতে সারা বাংলাদেশে কিন্তু এটার পারমিশন দিতে বাধ্য হবে। শহরে বেবি-ট্যাক্সি কয়টা চলবে এটার অনুমতি সিটি করপোরেশন কেন দিবে? এটা তো সিটি করপোরেশনের অধীনের কাজ না। এটা আপনাদের কাজ। আর স্ট্যান্ড কোথায় হবে? আদৌ কী স্ট্যান্ড দরকার আছে এই শহরে? এটা কিন্তু পায়ে হাঁটার শহর। আমার মনে হয়না, এতো দরকার আছে। যদি দরকার থাকে আপনারা সিটি করপোরেশনের সাথে আলাপ করেন নির্দিষ্ট জায়গায় এটা বসবে। কিন্তু একটা জিনিস লক্ষ্য রাখতে হবে, এরা কিন্তু এমনি এমনি বসেনা, এরা সমাজের বহু মানুষকে টাকা দেয়। 

হকার ইস্যুতে তিনি বলেন, আমরা মনে করছি আমরা দয়া করছি হকারদের। একটা দোকান মার্কেটের ভেতরে যা ভাড়া দেয়, আমার মনে হয় একটা হকার মাস শেষে তার চেয়ে বেশি টাকা দেয়। তারা হয়তো আমাকে দেয়, নয়তো পুলিশকে দেয় নয়তো কোন মাস্তানকে দেয় নয়তো সাংবাদিকে দয়। কাউকে না কাউকে তো টাকা দেয়। এখন কথা হচ্ছে, হকার মুক্ত করতে হবে। এটা একটা দাবি। মেয়র আইভী এটা অনেকদিন ধরে দাবি করে আসছে। ও বলে আসছে সেলিম সাহেব আপনার ভাই অনেকদিন ধরে হকার বসিয়ে আসছে। আমি মাইণ্ড করিনি। আমি গরিব মানুষের পক্ষে থাকার লোক। কিন্তু এ কথা যদি বলতে থাকি সমস্যার সমাধান হবেনা। সমস্যার সমাধান করতে হলে হকার মুক্ত করতে হবে। হকারমুক্ত করতে চান, আমার তরফ থেকে কোন বাধা আসবে না। আমরা সিদ্ধান্ত হচ্ছে হকার উচ্ছেদ করলে সবগুলো উঠাতে হবে। কবে উঠাবে সিদ্ধান্ত নেন। নিয়ম হচ্ছে, সিটি করপোরেশন ম্যাজিস্ট্রেট দিবে পুলিশ তাদের চাহিদা পত্র অনুযায়ী সহযোগিতা করবে। 

অটোরিকশা বন্ধের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, অটোরিকশা বা ব্যাটারি চালিত রিকশার বিষয়ে যা দেখলাম গতকাল শুক্রবার ৫ বার লোডশেডিং হয়েছে। এটা ডিসি সাহেব আপনি আপনার মত করে তদন্ত করেবেন। েএতো বার বিদ্যুৎ যাওয়ার কথা না। এই অটো রিকশাগুলো ব্যাটারি চার্জ করে আমার ধারণা সারা বাংলাদেশে এই ব্যাটারিগুলো কমপক্ষে এক হাজার মেঘাওয়াট বিদ্যুৎ নষ্ট করে। এতো বিদ্যুৎ নষ্ট করে আবার টাকা দিয়ে এই গাড়ি গুলো চলছে। 
যানজট কমিয়ে ভিন্ন রুটে বাস চলাচলের বিষয়ে তিনি বলেন,‘শহরে এটা গাড়ি যখন ঢুকবে মীরজুমলা সড়ক দিয়ে প্রবেশ করে বাস স্ট্যাণ্ডে চলে যাবে। তাতে করে হাইস্কুলের সামনের সড়ক ফ্রি হয়ে যাবে। তবে ট্রেন না কমালে এই যানজট কমাতে পারবেন না। ছোট একটা শহরের ‍উপর দিয়ে ট্রেন যদি দিনে ১৬ বার যাতায়াত করে তাহলে যানজট তো হবেই। এখন আবার এটা ডাবল ট্রেন লাইন হচ্ছে। তাহলে বন্দরের নেতা, সংসদ সদস্য এ কে এম সেলিম ওসমান সহ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী মিলে যদি রেল মন্ত্রণালয়ে গিয়ে বলে চাষাঢ়া থেকে দুই নম্বর গেইট পর্যন্ত ট্রেন লাইন উঠিয়ে দেওয়ার জন্য। এখানে বন্দরের লোকজন মাইন্ড করতে পারে। কিন্তু ট্রেন যদি দুই নম্বর গেট দিয়ে চলাচল করে তাহলে যানজট কোনভাবেই বন্ধ করতে পারবেন না। তাহলে সমাধান কী? ট্রেন লাইনটা থাকবে। ট্রেনটা চাষাঢ়া পর্যন্ত থাকবে শুধু সিঙ্গেল ইঞ্জিন নারায়ণগঞ্জ থেকে ঘুরে যাবে। এটা ঘুরে যেতে মিনিমাম ২ মিনিট সময় লাগবে। রেললাইনের এই সড়কটি যদি সিটি করপোরেশনের অধীনে নিয়ে নেওয়া যায়, তাহলে বাস শহরের ঢুকে মীর জুমলা সড়ক হয়ে সিটি করপোরেশনের সড়ক ধরে বের হয়ে যাবে। সেখানে আমরা সবাই মিলে যদি সিটি করপোরেশনের ফান্ড করতে পারি, তাহলে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ পুরাতন সড়কের উপর দিয়ে উঠিয়ে ফ্লাইওভার করে দিতে পারি। তাহলে আপনি টের পাবেন না এই শহরে গাড়ি চলাচল করছে। আর একেএম সামুসজ্জোহা যেটা আগে লিংক রোড নামে পরিচিত সেটা যদি সেনাবাহিনী ছাড় দেয় তাহলে শহরে যানজট নিয়ে কোন সমস্যা থাকবেনা। 

মেয়র আইভীকে রাজনীতি করতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ আইভী ছোট তারপরও বয়স হয়েছে। আর আমার বয়স ৬২। তো সারাজীবন রাজনীতি করতে হবে এমপি হতে হবে ওই মানসিকতা নেই। আমি রাজনীতি করতে আসছি। সেলিনা হায়াৎ আইভী সিটি করপোরেশনের মেয়র হয়েছেন রাজনীতি করবেন না। অবশ্যই রাজনীতি করতে হবে আপনাকে। রাজনীতির চেয়ে মহৎ কিছু নেই। কারণ আপনাকে একটা দলের সমর্থন দিয়ে পাশ করিয়ে আনা হয়েছে। তবে ভালো কাজটা আমরা সবাই মিলে করবো। 

দূরপাল্লার বাস স্ট্যান্ড অপসারন করতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন,‘ নারায়ণগঞ্জ থেকে দূর পাল্লার প্রায় তিনশ বাসের স্ট্যান্ড রয়েছে।এগুলো নারায়ণগঞ্জ থেকে ছেড়ে যায়। তারা ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড ব্যবহার করছে। এসব বাসের রুট পারমিট আছে বলে আমার মনে হচ্ছেনা। এটা ইন্টারডিস্ট্রিক গাড়ি শহরের রাস্তা বন্ধ করে গাড়ি চালাবে কেন। ওইটাকে কেউ বাধা দেননা কেন? আপনারা বলেছেন, ঢাকা শহরে ১০ টার আগে ট্রাক ঢুকতে পারেনা। তাহলে নারায়ণগঞ্জ শহরে ১০ টার আগে ট্রাক ঢুকে কেন? এটা যদি সিটি করপোরেশন শহরে ৪-৫ জায়গায় ব্যারিয়ার দিয়ে রাখে অথবা পুলিশ যদি নিশ্চিত করে রাত ১০ টার আগে ট্রাক শহরে ঢুকবে না আবার ভোট ৬ টার আগে সব বেরিয়ে যাবে। 

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক (ডিসি) মাহমুদুল হক, নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য একেএম সেলিম  ওসমান, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভি, জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আমির খসরু ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান চন্দন শীল, সাংবাদিকবৃন্দরা উপস্থিত ছিলেন।