১০ কোটি টাকা লাগলেও হাত কাইট্টা ফালাইয়া দিমু’, সেই মেয়রের অডিও ফাঁস

১০ কোটি টাকা লাগলেও হাত কাইট্টা ফালাইয়া দিমু’, সেই মেয়রের অডিও ফাঁস

আড়াইহাজার প্রতিনিধি :

চুরির অপবাদ দিয়ে তিন শিশুকে মারধরের পর দুই শিশুর চুল কেটে দেয়া নারায়ণগঞ্জের গোপালদী পৌরসভার সেই মেয়র হালিম সিকদার এবার নির্বাচনী সভায় হাত কেটে ফেলার হুমকি দিয়ে আলোচনায় এসেছেন। স¤প্রতি গোপালদী পৌরসভার রামচন্দ্রদী এলাকায় একটি নির্বাচনী সভায় তিনি বলেন,’মায়ের ইজ্জত যে হাত দিয়া নষ্ট করা হবে, সেই হাত যদি আমার ১০ কোটি টাকাও লাগে কাইট্টা ফালাইয়া দিমু।’

বৃহস্পতিবার তার ওই বক্তব্যের একটি অডিও ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে ছড়িয়ে পড়লে আলোচনা সমালোচনা শুরু হয়। তবে মেয়রের দাবি তিনি এমন কোন বক্তব্য দেননি। তার বক্তব্যের ভিডিও দেখাতে চাইলে তিনি ভিডিও দেখতেও রাজি হননি।

হালিম সিকদার আড়াইহাজার উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। টানা তৃতীয়বারের মতো তিনি গোপালদী পৌরসভা মেয়র পদে দলীয় মনোনয়নে নির্বাচন করছেন। তফসিল অনুযায়ী আগামী ২১ জুন এই পৌরসভার নির্বাচন হওয়ার কথা। এছাড়াও গত ৬ ফেব্রæয়ারি চুরির অভিযোগে তিন শিশুকে মারধরের পর গ্রাম ঘুরিয়ে দুই শিশুর চুল কেটে দেওয়ার অভিযোগে করা মামলার প্রধান আসামি হালিম সিকদার।

এই নির্বাচনে নারিকেল গাছ প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী তানভীর হোসেনের দাবি হালিম সিকদার তাকে উদ্দেশ্য করে হাত কেটে ফেলার হুমকি দিয়েছেন। তানভীর হোসেন ও হালিম সিকদার রামচন্দ্রদী এলাকার বাসিন্দা।

ভিডিওতে দেখা যায়, হালিম সিকদার তার সমর্থকরাও ভোটারদের উদ্দেশ্য করে বক্তব্য দিচ্ছেন। সেখানে তিনি বলছেন ‘এই গ্রামের কেউ যদি গাদ্দার, রাজাকার, মীরজাফরের সাথে যায়, তাহলে ২১ (জুন) তারিখের পর ২২ তারিখে তার সাথে খেলা হবে। রাষ্ট্র চালায় শেখ হাসিনা, শেখ হাসিনার দল আওয়ামী লীগ, নজরুল ইসলাম বাবু (সংসদ সদস্য) আওয়ামী লীগের, আমরা আওয়ামী লীগের। তাইলে ক্ষমতা আমাদের হাতে, এই বাংলাদেশের কাউরে ভয় পাওয়ার কথা আমাদের আছে?’

এসময় তিনি নেতা-কর্মীদের প্রশ্ন করেন, ‘শক্তি কার বেশি, ২১ তারিখ সেন্টারে ক্ষমতা থাকবে কার বেশি?’ তখন নেতা-কর্মীরা উত্তর দেন, ‘আমাদের।’ পরে হালিম সিকদার বলেন, ‘তাইলে ভয়ের কারণ কী? ভয়ের কোন কারণ নাই। এই রামচন্দ্রদীর কোন ভোট যদি অন্য কোন প্রতীকে চলে যায় তবে আমি মনে করবো আমার মায়ের মান সম্মান ইজ্জত ওই ব্যক্তিরে দিয়ে নষ্ট হবে।’

মেয়র তার বক্তব্যে বলেন, ‘গ্রামের ইজ্জত মানে মায়ের ইজ্জত। মায়ের ইজ্জত রক্ষা করতে হইলে গ্রামের সকলে এক ঝাঁকে যাইতে হইব। আর এই গ্রামের ইজ্জত যদি নষ্ট করে তইলে আমার মায়ের ইজ্জত নষ্ট হইব। মায়ের ইজ্জত যে হাত দিয়া নষ্ট করা হবে, সেই হাত যদি আমার ১০ কোটি টাকাও লাগে কাইট্টা ফালাইয়া দিমু।’ এসময় তার সমর্থকরা ‘এ্যাকশন এ্যাকশন ডাইরেক এ্যাকশন বলে শ্লোগান ধরেন।’

হালিম সিকদার বলেন, ‘রামচন্দ্রদী গ্রামের একটারে কিন্তু আতুইরা বানাইয়া দিমু। যেন ওরে কেউ দেখলে কয় তুই আমার মায়ের শইলে হাত দিছস এর লাইগা তোর হাত কাইট্টা দিসে।’

ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম নারায়ণগঞ্জ-২ (আড়াইহাজার) আসনের সংসদ সদস্য। স্থানীয় সংসদ সদস্যের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এমপি সাব আমারে খালি কয় ভাই এইডারে বোয়াইয়া দেই, ওইডারে বোয়াইয়া দেই। এইডারে বোয়াইতে এই লাগবো ওইডারে বোয়াইতে এই লাগবো। ওরা কিন্তু এখনো ঘর থেইক্কা বাইর হয় নাই। আমার অপেক্ষায় আছে।

আমি কই, নির্বাচনতো আমি আগেও করছি দুই বার। একবার আমার লগে আছিলেন আরেকবার আমার থেইক্কা দূরে আছিলেন। আমার রামচন্দ্রদীর মানুষের ঘাড় একটু ত্যাড়া। যত হেডমওয়ালা লোকই আসুক, যদি মন্ত্রীর পোলাও আমার লগে দাঁড় করায় দেন, আর রামচন্দ্রদীর মানুষ একজোট থাকে তইলে মন্ত্রীর পোলাও কিচ্ছু না। ওগোরে যেই টেহা দিয়া বোয়াইবেন হেই টেহা আমি আমার জনগণরে খাওয়াইয়া দিমু। আপনি খালি আড়াইহাজারে বইয়া থাকেন। আমি আর সুন্দর আলী (আড়াইহাজার পৌরসভা মেয়র) ঘুরমু আর আপনি জাতীয় নির্বাচনের সময় ঘুরবেন। রামচন্দ্রদীর মানুষ সর্বোচ্চ ভোট দিয়া আপনেরে পাস করাইবো। আমরার কোন ভয় নাই।

তহন আমারে কয়, আপনার ভাইরাসটা? আমি কই ভাইরাস ঘরতে বাইর হইতে পারলে তো। আপনি খালি দেখেন, ইলেকশনের দিন ভাইরাসটায় কেন্দ্রে এজেন্টনি দিতে পারে। এজেন্ট দিব কইত্তে।’

গোপালদী পৌরসভায় হালিম সিকদার ও তানভীর হোসেন ছাড়ারও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মনিরুজ্জামান ও গোপালদী বাজার বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ নেতা আবুল মনসুর নির্বাচনের মাঠে আছেন।

বক্তব্যের বিষয়ে তানভীর হোসেন বলেন, ‘ আমার বাড়ির পাশে প্রচারণা চালাতে এসে হালিম সিকদার আমাকে উদ্দেশ্য করে এসব বক্তব্য দেন। পরে তার লোকজন আমার বাড়ির সামনে এসে হুমকি ধামকি দিয়ে যায়।’

এমন বক্তব্যের পর তার এলাকার ভোটাররা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ আড়াইহাজারের নির্বাচনের পর হালিম সিকদার ও তার লোকজন ভোটারদের বলছে ভোটতো নৌকার এজেন্টদের সামনেই দিতে হবে। ভোটাররা যেন ভিন্ন কিছু না ভাবে। কেন্দ্রে আমার কোন এজেন্ট থাকতে দেয়া হবে না বলেও তিনি হুমকি ধামকি দিচ্ছেন। এবিষয়ে কথা বলতে রিটার্নিং কর্মকর্তাকে ফোন করেছি। তিনি আমাকে যেতে বলেছেন।’

অভিযোগ অস্বীকার করে হালিম সিকদার বলেন, ‘আমি এমন কোন বক্তব্য দিইনি। এমন কোন বক্তব্য কেউ কখনো দেয়? আর এধরনের কথা আমি বলতেও পারি না। এগুলা এখন এডিট করা যায়।’

সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বলেন, ‘ মেয়রের এমন কোন বক্তব্য আমি শুনিনি। আমাকে জড়িয়ে এমন কথা বলবেন তেমনটাও আমি মনে করি না৷ এখানে সবাই আওয়ামী লীগের লোক। তারা নিজেদের মতো নির্বাচন করছেন।’ এবিষয়ে নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা বশির আহমেদ বলেন, ‘ আমি এবিষয়ে কিছুই জানি না। স্বতন্ত্র প্রার্থী যদি আমাকে জানায় তবে এবিষয়ে খোঁজ করে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবো।