টানা তিন মেয়াদে নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্যের দায়িত্ব পালন করছেন বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার মনোনীত প্রার্থী হয়ে তিনি মনোনয়ন পত্র দাখিল করেছেন। সেখানে হলফনামায় দাখিলকৃত তথ্যের সাথে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়ে দাখিলকৃত হলফনামা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বিগত ৫ বছরের ব্যবধানে এই সংসদ সদস্যের সম্পত্তির পরিমাণ দ্বিগুণ বেড়ে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা হয়েছে।
এই আসন থেকে মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী (২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে) তিন মেয়াদে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। আর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর তিনি বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান।
জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত ২৮ নভেম্বর তিনি নির্বাচন অফিসে মনোনয়ন পত্র দাখিল করেন। সেই সাথে হলফনামা জমা দিয়েছেন। হলফনামা অনুযায়ী
নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য ও মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী পেশায় একজন ব্যবসায়ী এবং তার শিক্ষাগত যোগ্যতা বি.এসসি। হলফনামায় বাড়ি/ এপার্টমেন্ট ও অন্যান্য ভাড়া থেকে বছরে তার আয় ১ লাখ ২৬ হাজার টাকা। ব্যবসা থেকে তার আয় ৮২ কোটি ৩ লাখ ৬২ হাজার ৬০০টাকা। শেয়ার, সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংক আমানত থেকে আয় ৯১ লাখ ৪২ হাজার ৩৭৫ টাকা। সংসদ সদস্য হিসেবে প্রাপ্ত ভাতা বাৎসরিক ৩২ লাখ ৯৪ হাজার ৩৪৮টাকা। তার কাছে নগদ টাকা আছে ৯ কোটি ৬২ লাখ ৪৬ হাজার ৬৯৬ টাকা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে তার নামে জমা আছে ৬১ লাখ ৪৩ হাজার ১২৯টাকা। বন্ড, ঋণপত্র, স্টক এক্সচেঞ্জ এ শেয়ার রয়েছে ২২ কোটি ৫ লাখ ২৫ হাজার ৭১০ টাকা।
পরিবহন খাতে তার সম্পত্তির পরিমাণ ১ কোটি ৯৩ লাখ ১৩ হাজার ৫৫৭ টাকা। স্বর্ণ-অলংকার, ইলেকট্রনিক্স ও আসবাবপত্র সহ অন্যান্য সম্পত্তির পরিমাণ ১৩০৪ কোটি ৩১ লক্ষ ৬৬ হাজার ৬৭২ হাজার টাকা বলে তিনি হলফনামায় উল্লেখ করেন।
এছাড়া তার নামে জমি রয়েছে ৭৮ কোটি ৬৬ লাখ ৭৯ হাজার ৪৪৭ টাকা মূল্যের। তার নামে দালানকোঠা রয়েছে ২৮ কোটি ৬৮ লাখ ৫০ হাজার ১৯১ টাকা মূল্যের। তার নামে বিভিন্ন ব্যাংক ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ঋণের পরিমাণ ৯৩৫ কোটি ৩২ লাখ ৫ হাজার ২০৭টাকা।
মন্ত্রী গাজীর স্ত্রীর নামে নগদ টাকা রয়েছে ৭২ লাখ ২১ হাজার ৫৮৫ টাকা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে তার নামে জমা আছে ২৪ লাখ ৫২ হাজার ৫৬২ টাকা, বন্ড, ঋণপত্র, স্টক এক্সচেঞ্জ এ শেয়ার রয়েছে ৫ কোটি ৮৫ লাখ ২৫ হাজার ৭৬০ টাকার, স্বর্ণ-অলংকার ২৪ হাজার টাকা, ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা সহ অন্যান্য খাতে আরও ১ লাখ ২০ হাজার টাকার সম্পত্তি রয়েছে। এছাড়া তার নামে জমি রয়েছে ৬৮ লাখ ৮২ হাজার ৫ টাকা, দালান বাবদ সম্পদ ৩ কোটি ৮৮ লাখ ১৮ হাজার ১১ টাকা এবং বাড়ি বা এপার্টমেন্ট সংখ্যা ও অর্জনকারী সময়ে আর্থিক মূল্য ৫ লাখ টাকা।
তবে বিগত ৫ বছর পূর্বে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী নৌকার মনোনীত প্রার্থী হয়ে মনোনয়ন দাখিল করেন। সে সময়ে দাখিলকৃত হলফনামা অনুযায়ী বাড়ি ও অন্যান্য ভাড়া থেকে বাৎসরিক আয় ২লাখ ৫৯হাজার ২০০টাকা। ব্যবসায় থেকে তার বাৎসরিক আয় ৩৪ কোটি ৭১ লাখ ৯ হাজার ৫৩৭ টাকা। শেয়ার, সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংক আমানত আছে ২ কোটি ৫১ লাখ ৮৮ হাজার ৫৪৮ টাকা। বোর্ড মিটিং ফি ও সংসদ সদস্য হিসেবে প্রাপ্ত ভাতা হিসেবে বাৎসরিক ২৩ লাখ ৯২ হাজার ৭১৫ টাকা। তার কাছে নগদ টাকা আছে ৮ কোটি ১১ লাখ ২৫ হাজার ৮৮৮ টাকা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে তার নামে জমা আছে ৩২ কোটি ৫৫ লাখ ৯৯ হাজার ৩১৯ টাকা ।
পরিবহন খাতে তার সম্পত্তির পরিমাণ ১ কোটি ৯৩ লাখ ১৩ হাজার ৫৫৭ টাকা। তার নিজের নামে স্বর্ণ ও অন্যান্য মূল্যবান ধাতু রয়েছে ১ লাখ ১৪ হাজার টাকা । তার নামে ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী রয়েছে ১৬ লাখ ২০ হাজার টাকার। আসবাবপত্র রয়েছে ১৫ লাখ টাকার। অন্যান্য সম্পত্তির পরিমাণ ৬৯৬ কোটি ৭ লক্ষ ৬৪ হাজার ৮৫৩ হাজার টাকা তিনি তার হলফনামায় উল্লেখ করেন।
এছাড়া তার নামে জমি রয়েছে ৫ কোটি ৭৯ লাখ ৮১ হাজার ৪৫৮ টাকা মূল্যের । তার নামে দালানকোঠা রয়েছে ১ কোটি ৩৭ লাখ ৩০ হাজার টাকা মূল্যের। তার নামে বিভিন্ন ব্যাংক ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ঋণের পরিমাণ ৫৭৮ কোটি ৮৮ লাখ ২৬ হাজার ৯৬ টাকা যা তিনি তার হলফ নামায় উল্লেখ করেছেন।
তার স্ত্রীর নামে নগদ আছে ১২ লাখ ২৮ হাজার ২৯৬ টাকা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে তার নামে ৬ কোটি ৬৭ লাখ ৪২ হাজার ১০৮ টাকা। স্বর্ণ ও অন্যান্য মূল্যবান ধাতু রয়েছে ২৪ হাজার টাকা মূল্যের সম্পত্তি। ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী ৩ লাখ টাকার। আসবাবপত্র রয়েছে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকার। এছাড়া তার স্ত্রীর নামে জমি রয়েছে ৪ কোটি ৬৩ লাখ ৭০ হাজার ৩৮০ টাকা মূল্যের। বাড়ি রয়েছে ৩ কোটি ৮৭ লক্ষ ৫৮ হাজার ১১ টাকা মূল্যের।
এ বিষয়ে মন্তব্য নেওয়ার জন্য মন্ত্রী ও বর্তমান সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজীর নম্বরে একাধিকবার ফোন করেও পাওয়া যায়নি।
প্রসঙ্গত, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসন থেকে ৯ জনের মনোনয়ন বৈধ হয়েছে। তারা হলেন, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী-(আওয়ামী লীগ), তৃণমূল বিএনপির মহাসচিব তৈমুর আলম খন্দকার- (তৃণমূল বিএনপি), শাহাজাহান ভুইয়া- (স্বতন্ত্র), গাজী গোলাম মর্তুজা- (স্বতন্ত্র), মো. হাবিবুর রহমান- (স্বতন্ত্র), মো. জোবায়ের আলম- (স্বতন্ত্র), মো. সাইফুল ইসলাম- (স্বতন্ত্র), মো. জয়নাল আবেদীন চৌধুরী- (স্বতন্ত্র), একেএম শহিদুল ইসলাম- (ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ)।