কারাবন্দিদের ৩শতাধিক পণ্য উঠেছে বাণিজ্য মেলায়, সবার পছন্দের নকশিকাঁথা
BANGLAR NARAYANGANJ | Banglar Narayanganj প্রকাশিত: Jan 13, 2025
কারাগারের বন্দীদের হাতে তৈরি তিন শতাধিক পণ্য বিক্রি হচ্ছে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায়। কারাবন্দিদের পণ্য বিক্রির জন্য কারা অধিদপ্তরের আওতাধীন ‘বাংলাদেশ জেল কারা পণ্য’ নামে একটি প্যাভিলিয়ন সাজানো হয়েছে। বাঁশ, বেত, কাঠ ও পাট দিয়ে কারাবন্দিদের হাতে তৈরি বিভিন্ন পণ্য বিক্রি হচ্ছে বাণিজ্য মেলার ২৯তম আসরে। তবে জামদানি শাড়ি ও নকশী কাথার নজরকাড়া ডিজাইনে ক্রেতারা সবচেয়ে বেশি আকৃষ্ট হচ্ছেন। তবে কারাবন্দিদের পণ্য দেখতে প্যাভিলিয়নে ক্রেতা দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সূত্রে জানা গেছে, কারা বন্দিদের তৈরি পণ্য বিক্রির ৫০ শতাংশ টাকা বন্দিদের দেওয়া হবে। এসব টাকা তারা নিজেদের জন্য এবং পরিবার স্বজনদের জন্য খরচ করতে পারবেন।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, ‘বাঁশ ও বেত দিয়ে তৈরি মোড়া, প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি কুলা, কাঠ দিয়ে তৈরি নৌকা সহ নানা সুন্দর্যবর্ধক আইটেম, পাটজাত পণ্য, জামদানি শাড়ি, লুঙ্গি, গামছা, পাটের তৈরি ব্যাগ সহ নানা পণ্য রয়েছে। এখানে জামদানি শাড়ি সর্বোচ্চ ৬ হাজার টাকা থেকে ৪ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া সিংহাসন চেয়ার চার হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এসব পণ্য ঘুরে ঘুরে দেখছেন ও দরদাম করছেন ক্রেতারা। অনেকে আবার বিভিন্ন পণ্যের পাশে দাড়িয়ে ছবি তুলতে দেখা গেছে।
ফতুল্লা থেকে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মেলায় এসেছেন রাণী আক্তার। তিনি বলেন, কারাগারের পণ্য দেখতে খুব সুন্দর।বিশেষ করে শো-পিছ ও নকশিকাঁথা-জামদানি দেখতে খুব সুন্দর। তবে নকশিকাঁথা ও জামদানির দাম একটু বেশি মনে হয়েছে। একারণে ৩০০ টাকা দিয়ে পুতির তৈরি একটি শো-পিছ কিনেছি।
মেয়েকে নিয়ে মেলায় ঘুরতে এসেছেন হাসান আলী। তিনি বলেন, মেয়ে বাযনা করেছে কাঠের তৈরি শো-পিছ কিনে দেওয়ার জন্য। দাম একটু বেশি মনে হচ্ছে। পছন্দ হলে ও দাম মন মত হলে কিনবো।
নকশিকাঁথা বিক্রিতে ব্যস্ত সময় পারছেন কারা পণ্য প্যাভিলয়নের স্টাফ সোনিয়া। তিনি বলেন, আজকে ক্রেতার সংখ্যা অনেক বেশি।তবে নকশিকাঁথা ও জামদানি শাড়ির খোঁজে অনেকে এই স্টলে প্রবেশ করছেন। দুই হাজার ও চার হাজার থেকে শুরু করে বিভিন্ন দামে নকশিকাঁথা ও জামদানি শাড়ি বিক্রি হচ্ছে।
কারা পণ্য প্যাভিলিয়নের দেখভাল করছেন ডেপুটি জেলার আক্তারুজ্জামান। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, দেশের বিভিন্ন কারাগারের বন্দীদের হাতে তৈরি প্রায় ৩শতাধিক পণ্য মেলায় বিক্রি হচ্ছে। বাশ, বেত, পুতি, কাঠ দিয়ে নানা রকম ডিজাইনের বিভিন্ন পণ্য তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া ঐতিহ্যবাহী জামদানি ও নকশিকাঁথা সহ নানা পণ্য মেলায় ঠাই পেয়েছে। বাশের মোড়া, সিংহাসন চেয়ার, কাঠের শো-পিছ সহ নানা পণ্য ৩০ টাকা থেকে শুরু করে ৬ হাজার টাকা মূল্যের নানা পণ্য এখানে বিক্রি হচ্ছে। তাদের হাতে তৈরি এসব পণ্য দিয়ে বাণিজ্য মেলায় কারা পণ্য প্যাভিলিয়ন সাজানো হয়েছে।
পণ্য বিক্রির লভ্যাংশ কারাবন্দিরা পাবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই প্যাভিলিয়নের পণ্য বিক্রি করে যে লভ্যাংশ পাওয়া যায়, তার ৫০ শতাংশ কারাবন্দিদের প্রদান করা হয়। বন্দিরা এই অর্থ নিজেদের ব্যক্তিগত কাজে খরচ করতে পারে এবং পরিবার সদস্যদের কাছে পাঠাতে পারে। এছাড়া বিক্রির বাকি ৫০ শতাংশ সরকারি কোষাগারে জমা হবে।
কারা পণ্যের দিকে ক্রেতাদের ঝোক বেশি উল্লেখ করে তিনি বলেন, কারাবন্দীদের এসব পণ্য অনেকে সখ করে কিনে থাকেন। তাছাড়া ঐতিহ্যবাহী নকশিকাঁথা সহ ব্যতিক্রমদর্মী নানা পণ্যের দিকে ক্রেতাদের ঝোক অনেক বেশি।ফলে ক্রেতাদের বেশ চাহিদা রয়েছে। এসব কারণে বিগত বছরে কারা প্যাভিলিয়ন প্রথম স্থান অধিকার করেছে।
৩২ টি কারাগারের পণ্য প্যাভিলিয়নে তোলা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই প্যাভিলিয়নে ৩২ টি কারাগার থেকে পণ্য এসেছে। কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার ১ ও ২, মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগার, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার, নারায়ণগঞ্জ কারাগার, রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগার, বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগার, ময়মনসিংহ কেন্দ্রীয় কারাগার, চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার, কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগার, ফরিদপুর জেলা কারাগার, খুলনা জেলা কারাগার সহ মোট ৩২ টি কারাগারের বন্দিদের হাতে তৈরি নানা পণ্য এখানে তোলা হয়েছে।
বাংলাদেশ কারাগারের ডেপুটি জেলার ও কারা পণ্য প্যাভিলিয়নের ইনচার্জ সৈয়দ মোহাম্মদ জাবেদ হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এবার ৩২টি কারগার থেকে কারা পণ্য পেয়েছি। ৩২৫টির অধিক কারা পণ্য আমরা প্যাভিলিয়নে প্রদর্শন করছি। আসলে বন্দিরা যে সৃষ্টিশীল কাজ করতে পারে, সমাজে সংশোধন ও সংস্কার হতে পারে সেই ধারণাকে কেন্দ্র করে আমাদের এই কারা পণ্য নিয়ে মেলায় ্হাজির হয়েছি।তাছাড়া কারাগারের ভেতরে যে মানুষগুলো রয়েছে তারা কারা পণ্য তৈরি করে সংশোধনের মাধ্যমে আলোর পথ খুজে পাবে বলে আমি মনে করি।
এছাড়া আমাদের কারা সদর দফতরের পাশে প্রদর্শনী সেন্টার হবে, সেখান থেকে কারা পণ্য সংগ্রহ করতে পারবে।
আপনার মতামত লিখুন :